সেনাবিরোধী বক্তব্য দিয়ে বরখাস্ত হলেন মিয়ানমারের জাতিসংঘ দূত
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা বিদায় করতে সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানোর পর জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুনকে বরখাস্ত করেছে দেশটির সেনা শাসকরা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন তার দেশে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে আবেগঘন বক্তব্যে বলেন, অবিলম্বে সামরিক অভ্যুত্থানের অবসান ঘটাতে, নিরীহ লোকজনের ওপর নির্যাতন বন্ধে, জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সম্ভাব্য কঠোরতম পদক্ষেপ প্রয়োজন আমাদের।
এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, তিনি ‘দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং সরকার স্বীকৃত নয় এমন একটি সংগঠনের পক্ষে বলেছেন যারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না’। তিনি রাষ্ট্রদূতের ‘ক্ষমতা ও দায়িত্বের’ অপব্যবহার করেছেন।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘে বর্মিজ ভাষায় বক্তব্য শেষে তিন আঙুল উঁচিয়ে স্যালুট দেন। মিয়ানমারে সেনাশাসনবিরোধী চলমান আন্দোলনে জান্তা সরকারকে বিদায় করার প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে এভাবে তিন আঙুল উঁচিয়ে স্যালুট প্রদর্শন করে বিক্ষোভকারীরা।
মিয়ানমার নিয়ে বিশেষ বৈঠকে কিয়াও মোয়ে তুন জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি তার দেশের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিবৃতি জারি করে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানোরও আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রগুলোকে তার দেশের সেনাশাসকদের স্বীকৃতি প্রদান বা তাদের সহযোগিতা না করার অনুরোধ জানান তিনি।
এছাড়া গত নভেম্বরে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি জান্তাশাসকেরা যাতে শ্রদ্ধা দেখায়, সে লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টিও দাবি জানান তিনি।
কিয়াও মোয়ে তুন বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখব; যে সরকার জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ও জনগণের স্বার্থে পরিচালিত।’
রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যকে বিপুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানান সাধারণ পরিষদের সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড সাধারণ পরিষদে দেওয়া তার প্রথম বক্তৃতায় বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন।
আর চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন আবারও তার দেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, মিয়ানমারের চলতি ঘটনাপ্রবাহ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী।
তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে।
এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে।
এরপর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনাবাহিনী সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। জরুরি অবস্থার মধ্যেই জান্তা শাসন বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির জনগণ।
Tag: English News world
No comments: