মসজিদে মূর্তি নিয়ে বয়ান শুনে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙার সিদ্ধান্ত নিই
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর মামলার প্রধান দুই আসামি মাদ্রাসা ছাত্র মিঠুন ও নাহিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বেলা ২টায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে পুলিশ দুই আসামিকে আদালতে আনেন।
বেলা ২টা ৪০ মিনিটে ১৬৪ ধারা অর্থাৎ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেওয়া শুরু হয়। প্রথমে আসামি নাহিদকে আলাদা করে জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এরপর অপর আসামি মাদ্রাসা ছাত্র মিঠুনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিজ্ঞ বিচারক দেলোয়ার হোসেন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এই জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
১৬৪ ধারায় তারা দুজন বলেন, ওয়াজ শুনতে ভালো লাগে। বেশি ভালো লাগে ফয়জুল করিম ও মামুনুল হকের ওয়াজ। বর্তমান সময়ে শুনি ভাস্কর্য নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ আলী ও সহপাঠী আবু বক্করের সঙ্গে শীতের পোশাক কিনতে কুষ্টিয়া শহরে আসি। মাদ্রাসায় ফেরার পথে পাঁচ রাস্তার মোড় হয়ে যাই। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দেখি। ওই দিনই মসজিদে মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পর্কে বয়ান শুনি। সেখানে ইমাম ছিলেন ইবনি মাসউদ মাদ্রাসার নাজিমে তালিমা (দ্বিতীয় শিক্ষক) মাওলানা এবাদুর রহমান। তিনি মূর্তি ও ভাস্কর্যের ইতিহাস এবং এগুলো ইসলামে অবৈধ বলে বয়ান দেন। তিনি বয়ানে বলেন, কুষ্টিয়ায় পাঁচ রাস্তার মোড়ে শাপলার পরিবর্তে মূর্তি বসানো হয়েছে। নামাজ থেকে যাওয়ার পথে আমি আর আবু বক্কর পাঁচ রাস্তার মোড়ের মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলবো বলে আলোচনা করি। মাদ্রাসার নির্মাণাধীন মসজিদ থেকে দুটি হাতুড়ি নিয়ে রাতে ভাঙতে বের হই। হেঁটে এসে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলি।
স্বীকারোক্তিতে অপর ছাত্র মো. আবু বক্কর ওরফে মিঠুনও একই কথা বলেন। তারা বলেন, সকালে মাদ্রাসার শিক্ষকরা পালিয়ে বাড়িতে যেতে বলে।
এর পরে সন্ধ্যা ৬টার পরে আসামীদের কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে নেয়া হয়।
পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ভাংচুরের সাথে সরাসরি জড়িত মাদ্রাসার দুই ছাত্র আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই ঘটনার সাথে আরও কেউ বা কোন গোষ্ঠী জড়িত আছে কিনা সেই বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন তদন্তের অগ্রগতি আছে তবে তদন্তের
স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। যদি অন্য কারো নাম আসে বা যেই এর সাথে জড়িত থাকুক না কেনও সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল একই মামলার অপর দুই আসামি মাদ্রাসা শিক্ষক আল আমিন ও ইউসুফ আলীও চার দিনের রিমান্ড শেষে একই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। গত ৮ তারিখে পুলিশের আবেদনে চার আসামীর মধ্যে দুই মাদ্রাসা ছাত্রের ৫ দিন করে ও দুই মাদ্রাসা শিক্ষককে ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ড দেন আদালত। ৯ তারিখ থেকে এদের রিমান্ড শুরু হয়।
গত ৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পৌরসভার পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় পুলিশ সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে ভাংচুরের সাথে সরাসরি জড়িত দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করে। ঘটনার পরে মাদ্রাসার ওই দুই ছাত্রকে সহযোগিতা করার জন্য মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে এ মামলায় আসামি করা হয়।
Tag: English News politics
No comments: