জাতিকে মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানিদের প্রথম টার্গেট ছিল ঢাবি
শহিদ বুদ্ধিজীবীরা। ফাইল ছবি দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও পূর্ব বাংলার মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। ভাষার অধিকার, শাসনতন্ত্র, শিক্ষা সব অধিকার থেকে কৌশলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ অঞ্চলের অধিবাসীদের বঞ্চিত করে রেখেছিল। সময়ের পরিক্রমায় বাঙালি জনগোষ্ঠী প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এবং ভাষার অধিকার ফিরিয়ে আনে। ভাষা আন্দোলনে সফলতা থেকে প্রেরণা নিয়ে এদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক নেতাকর্মীরা পাকিস্তানি শোষণ থেকে মুক্তির জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। আর সেই মুক্তির আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বুদ্ধি, মেধা, মনন ও শ্রম দেয় এদেশের বুদ্ধিজীবীরা। পাকিস্তানি শাসকরা যখন নিশ্চিত পরাজয় অনুধাবন করল, তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় এখানকার বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার যে ধারা তা ধ্বংস করবে। এজন্য তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টার্গেট নিয়ে মিশন শুরু করে। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলার পর ১৪ ডিসেম্বর বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। বিজয়ের প্রাক্কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের বাছাই করে এক জায়গায় এনে ঠান্ডা মাথায় খুন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখকসহ পূর্ব পাকিস্তানের ২০০ বুদ্ধিজীবীকে ঢাকায় একত্রিত করা হয়েছিল। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ ও শহরের বিভিন্ন স্থানের নির্যাতন সেলে চোখ বেঁধে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের রায়েরবাজার ও মিরপুরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছে ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ জন অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী ও প্রকৌশলী)। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিলেন ২৩ জন শিক্ষক। তারা হলেন- ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শন), ড. মুনীর চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য), ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য), ড. আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস), ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য), ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), ড. এ এন এম ফাইজুল মাহী (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), হুমায়ূন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য), রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য), সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা), ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান), এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান), এ মুকতাদির (ভূ-বিদ্যা), শরাফত আলী (গণিত), এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা), অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা), এম এ সাদেক (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), এম সাদত আলী (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস), গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস) ও এম মর্তুজা (চিকিৎসক)। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাপস কুমার বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ওইদিন প্রথমে রাজারবাগে আক্রমণ হয়। এরপর জগন্নাথ হল ও তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমান শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) তারা আক্রমণ করে। তখন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। তখন তিনি হলে ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। এ সময় অন্যান্য যেসব শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারী-কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদেরকে হলের নর্থের সামনে জড়ো করে। তখন তাদেরকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। অধ্যাপক ড. তাপস কুমার বিশ্বাস আরো বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার সময় হলের পঞ্চাশের অধিক জনকে হত্যা করা হয়। তাদের স্মরণে সেখানে একটি নামফলক স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। সেসময় যা ঘটেছিল সবগুলোই ছিল হৃদয়বিদারক। কেননা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু হল ছিল এটি। এজন্য স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে আঘাত এসেছিল এই হলে। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী ছিল তারাই ছিল প্রথম টার্গেট। যখন পাকসেনারা পরাজিত হচ্ছিল তখন তারা এসব বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। ঢাবির এই শিক্ষক আরো জানান, সেই সময় সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ছিল ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানের তরুণ সহকারী অধ্যাপক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য হত্যা। কেননা তিনি আর কয়েকদিন পরেই বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষা করতে যাওয়ার কথা ছিল। এ সময় হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা পালাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাঁর অন্যান্য শিক্ষক, ছাত্রদের রেখে পালান নাই। তাদেরকে খুব নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারা জানত, বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে এই বুদ্ধিজীবীরা। এজন্য ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করা হয়। এ পরিকল্পনার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন করা হয় ১৪ ডিসেম্বর। তারা এদেশেরই কিছু মানুষকে ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। দেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এটা করা হয়েছে। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাবিতে কর্মসূচি শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এসব কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টা ৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পপস্তবক অর্পণের জন্য যাত্রা। এ ছাড়া, সকাল ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রশাসনিক ভবনস্থ প্রফেসর আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া, বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত এবং শান্তি কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
lid news
»
national
» জাতিকে মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানিদের প্রথম টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
জনপ্রিয় পোস্ট
-
শ্রাবন্তি কে কিস করে করলো বাংলার নায়ক শাকিব খান (ভিডিও)
No comments: