জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'অটোপাস' দেয়ার পরিকল্পনা নেই সরকারের, প্রয়োজনে পরীক্ষা নেয়া হতে পারে অনলাইনে
বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পযায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য এখনও পরীক্ষা নেয়ার কথা চিন্তা করছে সরকার।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা না নেয়া গেলে বিকল্প পদ্ধতিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতিও কর্তৃপক্ষের রয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, "সফটওয়্যার ভিত্তিক পরীক্ষা নেয়ার একটি ব্যবস্থা এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা ঐ সিস্টেমটি দিয়ে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে একটি পরীক্ষা নিয়ে দেখবো এবং তা যদি সফল হয় তাহলে ঐ সফটওয়্যারের মাধ্যমে অন্যান্য পরীক্ষাগুলো নিতে পারবো।"
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানান করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও জুমের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার সুবিধার্থে স্টুডিও ক্লাসরুম তৈরি করার কাজ চলছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অটোপাসের দাবির প্রেক্ষিতে এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
এর আগে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি একই রকম মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, "এইচএসসি'র পর একজন শিক্ষার্থী আরো পড়াশোনা করবে বলেই আমরা ধরে নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পরীক্ষার পর একজন শিক্ষার্থী কর্মজীবনে প্রবেশ করে। কাজেই পরীক্ষা না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করলে তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।"
উপাচার্য হারুনুর রশিদের মতে, "অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা না নিয়ে মূল্যায়ন করা হলে তারা কর্মক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে পারে। তাই আমরা কোনোভাবেই পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার পক্ষপাতী নই।"
সেশনজটের আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের
তবে শিক্ষার্থীদের অনেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের সাথে একমত হলেও কেউ কেউ মনে করেন শিক্ষা কার্যক্রম পিছিয়ে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তারা।
চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার্থী সাবিহা শফিকের কয়েকটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, এখনো তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি রয়েছে তার।
তার আশঙ্কা, পরীক্ষা শেষ করতে দেরি হওয়ায় তার লক্ষ্য অনুযায়ী সময়মতো বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন না তিনি।
"উচ্চ শিক্ষার জন্য এ বছরেই বিদেশে আবেদন করার ইচ্ছা ছিল। এ বছরে তো আবেদন করা হচ্ছেই না, পরের বছরও কবে পরীক্ষা শেষ হবে, কবে রেজাল্ট পাবো আর আবেদন করতে পারবো, তা নিয়েও এখন সন্দেহ তৈরি হয়েছে", বলেন সাবিহা শফিক।
আরেক দফা বাড়লো স্কুল, কলেজের ছুটি
নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত স্কুল, কলেজে ছুটি বাড়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, আগামী দুই সপ্তাহে পর্যালোচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে কি না।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের 'অটোপাস' করিয়ে দিতে সরকার আগ্রহী নয় বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
জুমে হওয়া একটি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি জানান পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে নভেম্বরের ১৪ তারিখের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মার্চ মাস থেকেই বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছিল।
বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত হয়েছিল
এবছর স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হবে না বলে গত সপ্তাহেই এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য এক মাসের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করে তার ওপর অ্যাসাইনমেন্ট নেয়ার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলন করে একথা জানিয়েছিলেন।।
তিনি জানিয়েছিলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট পাঠিয়ে দেবেন, এবং এরপর অনলাইনে কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্কুলে গিয়েও উত্তর জমা দেয়া যাবে।
বছর শেষে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে এই অ্যাসাইনমেন্টের উত্তরপত্রের মূল্যায়ন কোন প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
Tag: English News lid news national
No comments: