গারো পাহাড়ের পাদদেশে নজরকাড়া প্রাচীন মসজিদ গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত
। জেলার সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির নাম মাইসাহেবা জামে মসজিদ। জেলার প্রথম ও দেড়শ' বছরের প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা নিয়মিত ভিড় করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন মুক্তাগাছার সুসঙ্গ মহারাজার কাছ থেকে এই মসজিদের জমি দান হিসাবে পেয়েছিলেন মুসলিম সাধক মীর আব্দুল বাকী। মীর আব্দুল বাকীর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী সালেমুন নেছা বিবি, ভাগনে সৈয়দ আব্দুল আলী এবং স্থানীয় মুসলমানদের সহায়তায় মীর আব্দুল বাকীর কবরের পাশেই ১৮৬১ সালে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট দুই কাতারের মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মসজিদটিকেই শেরপুর জেলার প্রথম মসজিদ বলে স্থানীয়ভাবে গণ্য করা হয়। জানা যায়, সালেমুন নেছা বিবি ছিলেন ইমাম হাসান (রা:) এর বংশধর। এই বংশের নারীদের মাইসাহেবা এবং পুরুষদের মিয়া সাহেব বলে ডাকা হতো। সেই সময় স্থানীয় জনসাধারণ সালেমুন নেছা বিবিকে উপাধি অনুযায়ী মাইসাহেবা বলে সম্বোধন করতেন এবং মসজিদটি তাঁর নামেই পরিচিতি পেয়ে আসছে। শেরপুর পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র তিনআনী বাজার এলাকায় ৬৫ শতাংশ জমির পশ্চিম পাশে মসজিদটির অবস্থান। এর উত্তর ও পূর্ব পাশে রয়েছে শেরপুর সরকারি কলেজ। দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মসজিদে আরবি ক্যালিগ্রাফি খচিত বিশাল দুটি প্রবেশপথ প্রথমেই যে কোনো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জানা গেছে, তৎকালীন মুক্তাগাছার সুসঙ্গ মহারাজাকে শেরপুর পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান শেরপুরের নয়আনী জমিদার হরচন্দ্র চৌধুরী, তিনআনী জমিদার রাধাবল্লভ চৌধুরীসহ অন্যান্য জমিদারগণ। মহারাজা তাঁদের জানিয়ে দেন অন্যের জমিতে তিনি আহার ও রাত্রি যাপন করেন না। এসময় শেরপুরের জমিদারগণ তিনআনী বাড়ির পশ্চিমাংশের ২৭ একর লাখোরাজ সম্পত্তি মহারাজার নামে লিখে দিলে তিনি শেরপুরে আসেন। শেরপুর ছাড়ার সময় তাঁকে দেওয়া ওই জমি তিনি নিঃস্বার্থপর কেউ একজনকে দান করে যেতে চান। এ সময় অনেক সাধু সন্ন্যাসী এ জমির জন্য প্রার্থী হন। জমিদার জানতে পারেন, উল্লেখিত স্থানের তমাল বৃক্ষের নীচে বসে এক মুসলিম সাধক সবসময় ধ্যান ও উপাসনায় মগ্ন থাকেন কিন্তু তিনি জমির প্রার্থী হননি। সুসঙ্গ মহারাজা তাঁকে কিছু জমি দেওয়া হবে বলে ডেকে পাঠান কিন্তু ওই মুসলিম সাধক মহারাজার সাথে দেখা না করে জানিয়ে দেন, তিনি যতটুকু জমিতে বসে উপাসনা করছেন তার চাইতে বেশি জমির প্রয়োজন নেই তাঁর (মুসলিম সাধক)। এ কথা শুনে মহারাজা খুবই মুগ্ধ হন এবং দলিল লিখে ওই সাধককে ২৭ একর জমি দান করেন এবং মহারাজা নিজে ওই স্থানে এসে মুসলিম সাধকের হাতে দলিলটি হস্তান্তর করেন। ওই মুসলিম সাধকই হচ্ছেন পূণ্যময়ী সালেমুন নেছা বিবির স্বামী মীর আব্দুল বাকী। প্রথম স্থাপিত ওই মসজিদে দুই কাতারে ৩০ থেকে ৩৬ জন মুসুল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারতেন। মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর এই পূণ্যময়ী নারীর কৃতিত্বের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। দিন দিন মুসলিম সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯০৩ সালে আরও তিন কাতার বৃদ্ধি করে মসজিদ ভবন সম্প্রসারিত করা হয়। মসজিদের আদি কাঠামোটি মূলত ৪০ ইঞ্চি পুরুত্বের ইট, সুরকি ও চুনের মিশ্রণে গাঁথুনির দেয়াল ছিল। ২০ ফুট প্রস্থ এবং ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের মসজিদটি পাশাপাশি একটি বিশাল গম্বুজ ও অন্য দু’টি একটু ছোট কিন্তু সমমাপের গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। আদি এ মসজিদের প্রবেশদ্বার ছিল পাঁচটি। শেরপুরের অন্যতম স্থপতি আব্দুল্লাহ ইবনে সাদিক শাহীন আরটিভি নিউজকে জানান, মাইসাহেবা মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে অনেকটা গথিক স্থাপত্যের সংমিশ্রণে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে বর্তমান মসজিদের নকশা তৈরি করে ২০০১ সালে নতুনভাবে কাজ শুরু করা হয়। ৯৫ ও ৮৫ ফুট উচ্চতার দুটি সু-উচ্চ মিনার ও চারটি গম্বুজসহ তিনতলা বিশিষ্ট এ মসজিদের ছাদের উপর প্যারাপেট ওয়াল বেশকিছু ছোট ছোট গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত রয়েছে। সুউচ্চ মিনার দু’টি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত বা অনেক দূর থেকেও চোখে পড়ে। মূল মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে দুটি সিঁড়ি উঠে গেছে দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায়। মসজিদে সুবিন্যস্ত অজুখানা, পাঠাগার, সেমিনার কক্ষসহ ইমাম, মুয়াজ্জিনের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও। তিনি আরও জানান, পবিত্রতার প্রতীক হিসাবে সাদা রঙের প্রলেপনে নির্মিত হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট এ ঐতিহাসিক মসজিদটি। মসজিদের নীচতলা সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নীচতলাসহ দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে মসজিদ এবং এর চত্বর জুড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। মাইসাহেবা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন আরটিভি নিউজ জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য শেরপুর জেলার বাইরেও দূর দূরান্ত থেকে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা আসেন। জুমার নামাজের দিন মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেক সময় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মসজিদ আঙ্গিনায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে হয়। তিনি জানান, মসজিদের দানবাক্স থেকেই বছরে প্রায় এক কোটি টাকা আয় হয়। এমনও দেখা গেছে দানবাক্সে এক ব্যক্তিই পঁচিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ থেকে সত্তর হাজার টাকা পর্যন্ত দান করেছেন। তিনি আরও জানান, ঐতিহাসিক বিবেচনায় মসজিদটি পর্যটকদের জন্য এখন প্রধান আকর্ষণ হিসাবে পরিণত হয়েছে। ওই মসজিদে মীর আব্দুল বাকী, স্ত্রী সালেমুন নেছা বিবি, ভাগনে সৈয়দ আব্দুল আলীসহ পরবর্তীতে মসজিদের মুয়াজ্জিনসহ কয়েকজনের কবর রয়েছে।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
Featured
»
Zilla News
» সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের গারো পাহাড়ের পাদদেশে নজরকাড়া প্রাচীন মসজিদ
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: