করোনায় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের তিন ভাবনা
বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায়। চলমান অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, এটা ধরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তিনটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা নিয়েও ভাবছে মন্ত্রণালয়।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তারের কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো পাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, চারদিকে এমন গুঞ্জন চলছে। কয়েকটি গণমাধ্যমেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। কিন্তু, এ বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গুজব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরকারের তিনটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বছরের শুরুতে পুরো তিন মাস ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এখন চলছে জুলাই মাস। চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য সামনে আরো পাঁচ মাস আমাদের হাতে রয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেও যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষাবর্ষ সম্পন্ন করার পর বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিগুলোতেও ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
দ্বিতীয় পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ পরিস্থিতি যদি আরো তিন থেকে চার মাস স্থায়ী হয়, তাহলে আমরাও চলতি শিক্ষাবর্ষকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি বা মার্চ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাব। সে ক্ষেত্রে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ক্লাস চলবে।’
তৃতীয় পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাবের ভেতরেই যদি পুরো শিক্ষাবর্ষ চলে যায়, সে ক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা হলো শিক্ষার্থীদের ‘কোর কম্পিটেন্স’ বা যোগ্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণির জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হবে।’ বর্তমানে কোর কম্পিটেন্সের পদ্ধতি নিরূপণের কাজ চলছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অটো পাসের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এ যুগে এ ধরনের চিন্তা করাটাই অমূলক। আমরা এখনো আশাবাদী, একটু দেরিতে হলেও যথা নিয়েমে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’ পরীক্ষা নেওয়ার মতো শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সব প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অটো পাসের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আবুল খায়ের এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অটো পাসের বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। এ ধরনের কোনো কিছু নিয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের কোনো পর্যায়েই আলোচনা হয়নি।’
আবুল খায়ের আরো বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ থেকে আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এ সময়ের মধ্যে হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েও আসতে পারে। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বাসায় পড়ালেখার গাইডলাইনও দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়েও সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’
করোনাকালীন শিক্ষার বিষয়ে ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “গত ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই আমরা অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনেই আমরা ‘আমার ঘর আমার বিদ্যালয়’ নামে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। এরই মধ্যে আমরা প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নিয়ে খাতা মূল্যায়নের পর তা সরবরাহ করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।’
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা আরো বলেন, ‘চলতি বছর তিন মাস ক্লাস নেওয়ার সুযোগ পেলে আমরা চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে পারব। অটো পাস বা অটো প্রমোশন বিষয়ে প্রতিদিনই অভিভাবকদের কাছ থেকে অসংখ্য ফোন পাই। এটি নিয়ে সর্বত্র একটি বিভ্রান্তি চলছে। অভিভাবকরা মনে করছেন, এটি হলে শিক্ষা ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করা হবে।’
No comments: