করোনা দুর্যোগেও ১৮ লাখ টাকায় নতুন গাড়ি কেনেন সাহেদ
একদম সরকারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মতো ছিল তার চলাচল। ঢাকার বাইরে গেলে মাঝে মাঝে পেতেন ভিআইপি প্রটোকল। ঢাকায়ও ছিল দাম্ভিক চলাফেরা। সে রকমই ছাপ পাওয়া গেলো প্রতারণা ও জালিয়াতিতে অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতাল মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের গাড়িতে। শনিবার মধ্যরাতে ডিবির অভিযানে উত্তরা থেকে উদ্ধার হয় সাহেদের ব্যক্তিগত জিপ। অস্ত্র-গুলি ও মাদকদ্রব্যও জব্দ করা হয় গাড়ি থেকে।
জানা গেছে, নিশান এক্সট্রেইল ব্র্যান্ডের জিপটি বেশ আগে কেনা। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নিজের নামে থাকলেও, রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের সাথে সাথে গাড়ি থেকে নম্বরপ্লেট খুলে ফেলেন তিনি। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁ জনপথ এলাকায় রাস্তার পাশে গাড়িটি ফেলে রেখে, ঢাকা থেকে পালিয়ে যান তিনি। তবে, রহস্য দেখা যায় আরেকটি প্রাইভেটকার ঘিরে। কাছ থেকে দেখলেও বোঝা যাবে না, এটা সরকারি নাকি বেসরকারি গাড়ি। আমলা বা বিচারকরা যেসব ব্র্যান্ডের সরকারি গাড়িতে চড়েন, সেরকম টয়োটা হাইব্রিড মডেলের গাড়। সামনে বা পাশে পতাকার খুঁটি বা ফ্লাগস্ট্যান্ড এবং গাড়ির সামনে দুটি সরকারি স্টিকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত একটি স্টিকারে লেখা করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের জরুরি কাজে নিয়োজিত। উপরে আরেকটি স্টিকারে লেখা, কোনো তল্লাশী বা নিরাপত্তার জন্য চেকিং ছাড়ায়, যেকোনো জায়গায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশপত্র।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা যমুনা নিউজকে জানিয়েছেন, সরকারি মনে হলেও এটা আসলে তার নিজের প্রাইভেটকার। মাস দেড়েক আগে তিনি এটা কিনেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, করোনা সংক্রমণের পর জালিয়াতিতে উপার্জিত টাকা থেকে তিনি প্রাইভেটকারটি কেনেন। রাজধানীর গুলশানের কার অটো মিউজিয়াম নামের দোকান থেকে তিনি কেনেন। ডিবি পুলিশ জানায়, ওই দোকানের মালিক ডন ভাই নামের একজন, যিনি দেশের গাড়ি ব্যবসার জগতে পরিচিতমুখ। গাড়ির দাম সাড়ে ১৭ লাখ টাকা চেক ও নগদ টাকা দিয়ে পরিশোধ করেন তিনি। প্রাইভেটকারটি চারদিন আগে, ঢাকার আশুলিয়া থেকে গাড়ি চালকসহ আটক করে র্যাব। রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশকে দেয়া এসব তথ্য যাচাই বাছাই চলছে। গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা জোনাল টিমের এডিসি বদরুজ্জামান জিল্লু বলেন, শুধু প্রতারণা মামলা নয়। সাহেদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির খবরও নেয়া হচ্ছে। তার বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে নগদ টাকার খোঁজ করা হচ্ছে। সবগুলো বিষয়ই তদন্তে আসবে। করোনা দুর্যোগেও এই গাড়ি কেনার টাকা কোথা থেকে পেলো তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
No comments: