চীনের প্রখ্যাত সমরবিশারদ 'সান ঝুর' বিখ্যাত একটি কথা হলো, ‘যদি তুমি নিজের এবং শত্রুর সম্পর্কে না জানো তাহলে সব লড়াইয়েই তুমি হারবে। যদি তুমি নিজের সম্পর্কে জানো কিন্তু শত্রুর সক্ষমতার বিষয়ে না জানো, তাহলে তোমার প্রতিটি জয়ের পরপরই হারের আশঙ্কা থাকবে। আর যদি তুমি নিজের ও শত্রুর উভয়ের বিষয়ে জানো, তাহলে শত লড়াইয়েও তোমার হারের আশঙ্কা নেই।’
ভারতীয় একটি সিনেমার কথা ছিল, 'হেরে যে জিতে যায় সেই বাজিগর'। আসলে ভারত কি জিতে হেরেছে? না হেরে জিতবে?
বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনা অর্থনীতি ভারতের চাইতে ৪ গুণেরও বড়। দারিদ্র্য, জনসংখ্যা, টেকনোলোজিক্যাল এডভান্সমেন্ট কিংবা সামরিক শক্তি কোন কিছুতেই চীন ভারতের চেয়ে পিছিয়ে নেই। বরং আগামী ২০ বছরে ভারত তার সর্বশক্তি দিয়েও চীনকে পরাস্ত করবার ক্ষমতা রাখবে কিনা সন্দেহের বিষয়।
ভারত জানে চীন ইগো (Ego) দেখাচ্ছে। ইগো মানে জেদ কিংবা অহংকার। কিন্তু ভারতীয়রা কি জানে, EGO এর মান্দারিন অর্থ ঘিরে ফেলা? ভারতকে চীনের দেখানো এই 'ইগো' জিনিসটার মর্ম আজো ভারতের নীতি-নির্ধারক, বিশ্লেষক কেউই উপলদ্ধি করাতে পারেনি। যার ফলাফল, ভারতের সকল প্রতিবেশীই ভারত থেকে দূরে সরে গিয়েছে। ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এতই বিদঘুটে করে নিয়েছে ভারতের পক্ষ নেবার মত দক্ষিণ এশিয়ায় তেমন কোন মিত্র নেই। এমনকি বাংলাদেশ যে নিজেও ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র, সেখান থেকেও পরোক্ষভাবে ভারতকে সমর্থন না জানাবার সিদ্ধান্ত এসেছে।
ভারত হতাশ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চীনা পন্য বর্জন কিংবা সীমান্তে চীনের অনেক সৈন্যের মৃত্যু এবং হতাহতের খবর ভারতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে চীড় ধরা ভারতের জনগণ আদতেই দ্বিধাবিভক্ত। চীন সে দ্বিধাবিভক্তির সুযোগ নিচ্ছে।
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েল এর সাহায্য আশা করতে পারে।কিন্তু ভারত আদতেও জানে না, চীন ভারতের ভেতর কতটা কব্জা করেছে।আর তার জবাব আমেরিকা অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে চীনকে দেবার ক্ষমতা রাখে কি না? বা তাদের সে ইচ্ছেও আছে কিনা? চীনা পণ্য বর্জনের ঘোষণায় চীন "Boycott China " এর মত ইস্যুতে আরো পরোক্ষ বিনিয়োগ করবে।
চীনের কাছে যেকোন প্রচারণাই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এখনো বুঝতে পারেনি, চীনের লক্ষ্য ভারত না, বরং যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে চীন বরাবরই হতাশ। দক্ষিণ চীন সাগর কিংবা নতুন কোন বাণিজ্য যুদ্ধ। চীন একটি উপায় বের করে হলেও আমেরিকায় পণ্য পৌঁছে দেবে। কিন্তু আমেরিকার কি সুযোগ আছে? বাণিজ্য যুদ্ধের খরচ যদি আমেরিকানদের ট্যাক্স দিয়ে পুষিয়ে দিতে হয়,তবে চীনের ক্ষতি কি? চীন দরকারে তাদের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবে।যেমনটি তারা Huawei তে করেছে।ভারতের সে সক্ষমতা আছে? অর্থনৈতিক এ দূরবস্থায় প্রতিবেশীদের ভারতীয় বলয়ে আনার সক্ষমতা বাদ দেয়া হলেও, নিজ দেশের টাটা, রিলায়েন্স এর মত কোম্পানীকে কতটা প্রণোদনা দেয়ার ক্ষমতা আছে ভারতের?
তাহলে উপায়? উপায় একটাই, আপাতত চীনের কাছে হার মানা, লাদাখ নিয়ে বলিউডে মিথ্যে একটি সিনেমা বানানো, সেনাদের মনোবল বাড়াতে মিথ্যে প্রচার করা, কিংবা আরো সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করা। আদতে ভারত এখন যাই করুক, ভারতকে হার মানতে হবেই।
প্রবাদ আছে, নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। ভারত কখন নিজের ভালো বুঝতে পারবে তা জানা অসম্ভব হলেও, ভারতকে এখনই ভাবতে হবে। অর্থনীতির ঘোড়ার দৌড় না বাড়াতে পারলে ভারতকে যে নতজানু হয়ে থাকতে হবে, তা বিজেপি কিংবা কংগ্রেস কারোরই অজানা থাকার কথা না।
আপাতত বাজিগর ভারত নয়, বরং চীন। ভারত কবে বাজিগর হবে সেটাই দেখার বিষয়।
সূত্র- ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম
No comments: