Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » করোনাভাইরাস ও দক্ষিণ কোরিয়া: ভাইরাসকে পরাস্ত করতে কীভাবে দেশটিতে জীবনধারা বদলে গেছে




দক্ষিণ কোরিয়ায় গতকালই ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের পর প্রথম দিন যেদিন দেশের ভেতর থেকে একজনও কোভিড-নাইনটিনে সংক্রমিত হয়নি।
চারজনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে যাদের প্রত্যেকেই বিদেশ থেকে সেখানে ঢুকেছিল এবং বিমানবন্দরে ভাইরাস শনাক্ত হবার পর সেখান থেকেই তাদের আলাদা করে ফেলা হয়েছে।
এদের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিশ্চিতভাবে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০,৭৬৫।
এটা দেশটির জন্যে একটা যুগান্তকারী সাফল্য। কারণ এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের গোড়ার দিকে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে বড় হটস্পট ছিল দক্ষিণ কোরিয়া।
তবে এই সাফল্যের জন্য দেশটিকে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হয়েছে। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল দেশটি সম্পূর্ণভাবে লকডাউনেও যায়নি।
"এটাই দক্ষিণ কোরিয়া এবং দেশটির নাগরিকদের বিশেষত্ব," বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন।
কীভাবে তারা এটা করল?
ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণের হার খুবই বেড়ে যায় - যখন দেইগু শহরে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠির মধ্যে অনেকের ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়ে।
শিনজিওঞ্জি নামে একটি গির্জার একজন সদস্যের থেকে গির্জার অনেক সদস্য সংক্রমিত হয় এবং তাদের থেকে আরও কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
সরকার এরপর ব্যাপক মাত্রায় পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে দেয়।
সারা দেশে অস্থায়ী ক্লিনিক বসানো হয় - যেখানে গিয়ে গাড়ির ভেতরে বসেই মানুষ তার পরীক্ষা সেরে নিতে পারে। এছাড়াও সবার পরীক্ষা করা হয় বিনামূল্যে।
এখানে দেখা যাচ্ছে রাজধানী সোলে মানুষ তাদের গাড়ি থেকে কীভাবে কোভিডের পরীক্ষা করাচ্ছেন।
ড্রাইভ থ্রু বা গাড়ি থেকে না নেমে পরীক্ষা করানোর ক্লিনিকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে শুরু করে দেশটির মানুষ - ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
বিশাল পরিসরে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমিতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। কিন্তু সে কারণে কর্তৃপক্ষ গোড়া থেকেই কারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের সফলভাবে চিহ্ণিত করতে সক্ষম হয়, এবং দ্রুত তাদের আলাদা করে ফেলে তাদের চিকিৎসা দেয়।
এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া সফলভাবে এবং খুবই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে যেটা করেছিল সেটা হল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং- অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা এসেছে তাদের খুঁজে বের করা, এবং যারা পজিটিভ তাদের খুঁজে বের করে তাদেরও আলাদা করে ফেলা ও তাদের চিকিৎসা করা।
কেউ পজিটিভ শনাক্ত হলেই কর্তৃপক্ষ তার কাছাকাছি বসবাস করে বা তার সঙ্গে কাজ করে এমন লোকেদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠাতে শুরু করে। শুরু হয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বার্তা আসার স্রোত। মানুষও দ্রুত এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
Banner image reading 'more about coronavirus'

Banner
আশেপাশে কারো সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে ফোনে এমন সতর্ক বার্তাছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionআশেপাশে কারো সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে ফোনে এমন সতর্ক বার্তা আসা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে ওঠে।
একসময় জানা যায় শিনজিওঞ্জি গির্জার যে গোষ্ঠিটির মধ্যে সংক্রমণ প্রথম নিশ্চিতভাবে ধরা পড়ে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরেই দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ সংক্রমণের শিকার হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সব গির্জা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। কর্মকর্তারা জনসমাগম ঠেকানোর জন্য সর্বোতভাবে মাঠে নামেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় কীভাবে বদলে গেছে জীবন?

গতকাল গির্জাগুলো আবার খুলে দেয়া হয়েছে। তবে সেখানে প্রার্থনা করতে যারা যাচ্ছে, তাদের মাস্ক পরে দূরত্ব বজায় রেখে বসার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ইস্টারের প্রার্থনাসভায় মাস্ক পরে ধর্মোপদেশ দিচ্ছেন যাজক।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionগির্জায় এমনকী যাজকও মাস্ক পরেই ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
একই নিয়ম জারি করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্যও। গত সপ্তাহে এই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বসেছিল।
তাদেরও যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষায় বসানো হয়। (ভাইরাস মোকাবেলার পাশাপাশি এর ফলে টোকাটুকিরও সুযোগও কম!)
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সরকারি কাজের জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে বসেছেন একদল পরীক্ষার্থী।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionকরোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সরকারি কাজের জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে বসেছেন একদল পরীক্ষার্থী।
দুপুরে লাঞ্চের বিরতিতে কেউ এখন সামাজিকতা করছে না, অথবা কর্মস্থলে ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে বসে সহকর্মী বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমাচ্ছে না।
লাঞ্চ খাবার রেস্তোঁরাগুলোতে লাঞ্চের বিরতির সময় এমনভাবে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে যাতে ছোট ছোট দলে অল্পসংখ্যক মানুষ দূরত্ব বজায় রেখে দুপুরের খাওয়া সারতে পারেন।
এছাড়াও যারা খাচ্ছেন, তাদের সুরক্ষা স্ক্রিন দিয়ে ঘিরে দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাইউনন্ডাই মোটর নির্মাতা সংস্থার অফিসের ক্যাফেতে দুপুরের লাঞ্চবিরতিতে খাওয়া সারছেন কর্মীরা।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionসুরক্ষা স্ক্রিনের ঘেরাটোপে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন অফিস কর্মীরা।
তবে দেশটির সব রেস্তোঁরা এবং ক্যাফেতে নিয়ম এত কড়াকড়িভাবে মানা হচ্ছে কি না তা স্পষ্ট নয়। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষকে বলা হয়েছে সমাজের সব ক্ষেত্রে এখনও তাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
তবে বহু মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন যদিও এই স্বাভাবিক জীবনের সংজ্ঞা খুবই নতুন।
যেমন মানুষ রাস্তাঘাটে বেরিয়েছেন। কিন্তু কোন অনুষ্ঠান বা কোন ভবনে ঢুকতে গেলে আগে তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
যেমন নিচের ছবির এই নারী, যিনি গত সপ্তাহে বুদ্ধ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। আরও অনেক মানুষ যোগ দেন ওই অনুষ্ঠানে যাদের সবার শরীরের তাপমাত্রা মেপে সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়।
উপাসকদের ফেস মাস্ক পরে বুদ্ধ জয়্ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionকোন অনুষ্ঠান বা ভবনে ঢোকার আগে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে।
তবে এ মাসের গোড়ায় এই করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যখন দেশটিতে নির্বাচন হয়ে গেল সেটি ছিল এই ভাইরাস মোকাবেলায় দেশটির দক্ষতার আসল পরীক্ষা।
জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবার জন্য ১৫ই এপ্রিল ভোট কেন্দ্রগুলোর বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়ান হাজার হাজার ভোটার। তাদের সবাইকে দেয়া হয়েছিল প্লাস্টিক গ্লাভস্। বলা হয়েছিল নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে।
ভোট কেন্দ্রে ঢোকার আগে প্রত্যেক ভোটারের শরীরের তাপমাত্রা মেপে তবেই তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়।
একটা বড় আশংকা ছিল, ওই নির্বাচনের কারণে দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা এক লাফে খুব বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু দু সপ্তাহ পরে দেখা গেছে সে আশংকা সত্যি হয়নি।
ক্ষমতাসীন দল বিপুলভাবে আবার জয়ী হয়েছে। যা দেশটির সরকার এই সংকটের মোকাবেলা যে সাফল্যের সাথে করেছে - তার প্রতি জনসমর্থনের একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ায় সংসদীয় নির্বাচন হয়েছে।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionকরোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ায় সংসদীয় নির্বাচন হয়েছে।
দেশটি এমনকী তাদের গণ পরিবহন ব্যবস্থাকে প্রায় ভাইরাস মুক্ত রাখতে সফল হয়েছে।
সাবওয়ে স্টেশনগুলো নিয়মিতভাবে ঝকঝকে রাখা হচ্ছে, জীবাণুনাশক স্প্রে করে স্টেশনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে যাতে মানুষ যাতায়াতের সময় জীবাণুমুক্ত বাতাসে নি:শ্বাস নিতে পারে।
সুরক্ষা পোশাক পরা কর্মীরা নিয়মিত করোনার জীবাণু ধ্বংসকারী অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে স্টেশনগুলো পরিষ্কার করছে।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionসুরক্ষা পোশাক পরা কর্মীরা নিয়মিত করোনার জীবাণু ধ্বংসকারী অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে স্টেশনগুলো পরিষ্কার করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বেসবল খুবই জনপ্রিয় খেলা। সেখানে বেসবল ম্যাচগুলো চলছে ঠিকই।
যদিও মাঠে কোন দর্শক চোখে পড়ছে না। ফ্যানদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
আম্পায়ারদেরও যেতে হচ্ছে গ্লাভস পরে। আর খেলোয়াড়দের জন্য হাতে হাত মেলানো নিষেধ।
জামসিল বেসবল স্টেডিয়ামের বেসবল ম্যাচ ছিল ২১শে এপ্রিল ২০২০ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionমাঠে খেলা হচ্ছে তবে দর্শকবিহীন।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুল করছে, তবে ঘরে বসে। ক্লাসরুমগুলো এখনও ফাঁকা। পাঠদান হচ্ছে সবই অনলাইনে।
"এপ্রিলের মাঝামাঝি ক্লাস আবার শুরু হলে আমরা নতুনভাবে পাঠদানের চিন্তাভাবনা করছি," বলছেন প্রধানমন্ত্রী চুং সিয়ে চিউন।
"আমরা চেষ্টা করছি যাতে দূর থেকে পড়ানোর পদ্ধতি সফলভাবে কাজ করে, কিন্তু কোভিড-নাইনটিন মহামারি যাতে স্থিতিশীল হয় সেটা আমরা অবশ্যই সব চেষ্টা দিয়ে করব যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা আবার স্কুলে যেতে পারে।"
শূণ্য ক্লাসঘর থেকে মাস্ক পরে অনলাইনে প্রথম দিনের পাঠ দিচ্ছেন একটি স্কুলের শিক্ষিকা।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionশূণ্য ক্লাসঘর থেকে মাস্ক পরে অনলাইনে পাঠদান এখন চলছে অনেক স্কুলে
দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষ জীবন যাপনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ কঠোরভাবে জারি করেছে - তাতে দেশটি এই প্রাদুর্ভাব সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে।
এখন যে কেউ দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলে প্রথম ১৪ দিন তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতেই হবে। কাজেই নতুন করে সংক্রমণ সেখানে ঢোকা কঠিন হবে।
কিন্তু কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন। কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বলেছে ভ্যাকসিন না বেরুনো পর্যন্ত মহামারি আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply