কিশোরগঞ্জের হাওরে এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আগাম জাতের ধান কাটা। তবে বাম্পার ফলনেও খুশি হতে পারছে না কৃষক। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না ধানকাটা শ্রমিক। এ অবস্থায় ধান ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তিত তারা।
একদিকে শ্রমিক সংকট। অপর দিকে ধেয়ে আসছে উজানের পানি। এরই মধ্যে বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সুনামগঞ্জ হয়ে কিশোরগঞ্জে প্রবেশ করে উজানের পানি। ফলে চরম আশংকায় কৃষকদের চোখে ঘুম নেই। এ অবস্থায় পুরোপুরি পাকার আগেই ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। বাইরের জেলাগুলো থেকে কৃষি শ্রমিক আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কিশোরগঞ্জে এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে মাঠে রং ছড়াচ্ছে সোনালী ধান। তবে ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। প্রতি বছর এ সময়টাতে উত্তরাঞ্চল থেকে হাওরে ধান কাটতে আসে হাজার হাজার শ্রমিক। তবে এবারের দৃশ্যটা ঠিক উল্টো। করোনায় থমকে আছে সারা দেশ। তাই চড়া মজুরি দিয়েও মিলছেনা শ্রমিক। এ দিকে আগাম জাতের ৩৫ ভাগ ধান কাটা শুরু হলেও ব্রি-২৯ জাতের ৬৫ ভাগ ধানই কাটা শুরু হতে এখনও বাকি ১৫ দিন। রয়েছে আগাম বন্যার আশঙ্কা। এ অবস্থায় সময়মতো ধান কাটা নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক।
জেলার বিভিন্ন হাওরে ঘুরে দেখা গেছে, দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা কৃষি শ্রমিক। অনেক হাওরে স্থানীয় কৃষকরা দলবেঁধে একে-অন্যের ধান কেটে দিচ্ছেন। তবে কৃষকদের এমন দুর্দিনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি প্রকৌশলী রেজওয়াসন আহাম্মদ তৌফিক ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে হাওরে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রায় তিন’শ একর জমির ধান কেটে মারাই শেষে কৃষকদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
হাওরের কৃষকরা জানান, আগাম জাতের মাত্র ২০ ভাগ ধান পেকেছে। এরই মধ্যে কাটা প্রায় শেষ দিকে। তবে নিচু জমিতে দেরিতে বুনা ব্রি-২৯ জাতের ধান পাকতে আরও ১০/১২ দিন লাগবে। এসব ধান নিয়ে দেখা দিয়েছে আশংকা। নিচু জমির এসব ধান মেশিনে কাটা সম্ভব না। এ জন্য শ্রমিক সংগ্রহের কোন বিকল্প নেই।
গত বছর ধানের দাম না পেয়ে মার খেয়েছে হাওরের কৃষক। তাই এবার এমনিতেই হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে কম। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় সংসার খরচ ও ধার-দেনা মিটাতে কাটার পর জমির পাশেই কম দামে ভেজা ধান বিক্রি করে দিচ্ছে অনেকে। দ্রুত বেশি দামে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি তাদের।
কৃষি বিভাগ বলছে, বন্যার হাত থেকে মাঠের ফসল রক্ষায় বাইরে থেকে শ্রমিকদের আনা হচ্ছে। সেই সাথে স্থানীয় কৃষি শ্রমিকসহ, বিভিন্ন জন প্রতিনিধি ও সংগঠন স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছে। ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পুরোপুরি পাকার আগেই ধান কেটে ফেলার পরামর্শ কৃষি বিভাগের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মো. ছাইফুল ইসলাম জানান, আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে পরিপূর্ণভাবে পাকার আগেই ধান কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করি সময় মতো হাওরের ধান কাপ শেষ হবে।’
চলতি মওসুমে কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার মে: টন চাল। গত বছর ধানের দাম না পাওয়ায় এবার হাওরে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদী রয়েছে।
Tag: Zilla News
No comments: