পুলিশের ২১৮ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
অনুকরণীয় সব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর পাশাপাশি মানুষের সুরক্ষায় হাসিমুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বহু পুলিশ সদস্য।
সারাদেশে ২১৮ জন পুলিশ সদস্যের শরীরে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছ। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশেরই (ডিএমপি) ১১৭ জন সদস্য।
আক্রান্তদের মধ্যে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তারাও। তবে কনস্টেবলের সংখ্যাই বেশি। এর বাইরে আরও ৬৫২ জন পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় পৌনে ২৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছে আরও অন্তত ১ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৭ লাখের বেশি ব্যক্তি।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১৮৬ জনের দেহে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১২৭ জন, সুস্থ হয়েছেন ১০৮।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২১৮ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬৫২ জন।
পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম) মো. সোহেল রানা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে পুলিশের সদস্যরাই প্রিয়জন পরিত্যক্ত ও পথের পাশে পড়ে থাকা মৃতব্যক্তির পাশে যখন আর কেউ নেই তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও যথাযথ সন্মানের সাথে তার সৎকার করা থেকে শুরু করে দৃশ্যমান সব কিছুর সঙ্গেই রয়েছে।’
‘‘আমাদের দুই লক্ষাধিক সদস্যের একটি বড় অংশ সরাসরি মাঠে থেকে করোনার বিস্তাররোধে কাজ করছেন। তাদেরকে যথাসম্ভব সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এখনও অনেক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা পূরণে কাজ করছি আমরা। অবশ্য, পুলিশের সদস্যরা নিজেদের পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষার জন্য কখনই অপেক্ষা করে বসে থাকেননি। বসে থাকছেন না।’’
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়েছে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সামাজিক সংক্রমণের তৃতীয় ধাপে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
মো.সোহেল রানা
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সামাজিক সংক্রমণ রোধে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের সুরক্ষায় কি করবে প্রতি কোনো নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম) মো. সোহেল রানা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য লিখিত নির্দেশনা দেয়া আছে। সামাজিক সংক্রমণ এড়াতে দায়িত্বরত সময়সহ পুলিশি ব্যারাকে কিংবা নিজ বাসায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর) জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৩৮২ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। যা ৩৮.৪৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৯ জন, যা ৪.১৫ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ৩৩ জন, যা ০.৯২ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ৬৩ জন, যা ১.৭৫ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ৩৭ জন, যা ১.০৩ শতাংশ।ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩৯ জন, যা ৩.৮৭ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ৭৪ জন, যা ২.০৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৩১ জন, যা ০.৮৬ শতাংশ।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, করোনায় আক্রান্ত ২১৮ সদস্যের মধ্যে ১৭৭ জনই ঢাকা বিভাগে কর্মরত। তার মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের ১১৭ জন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের ২৬ জন, নারায়ণগঞ্জ পুলিশের ১৬ জন, গোপালগঞ্জ পুলিশের ১৮ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ৩৮ জন অন্যান্য জেলার।
গতকাল পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সকল রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি পুলিশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
এছাড়া, দেশের ৫টি বিভাগে চিকিৎসার আয়োজন করা হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় যে চিকিৎসা দেয়া হবে, একই চিকিৎসা বিভাগীয় হাসপাতালেও দেয়া হবে। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেনজীর আহমেদ
যে সকল পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টিনে, আইসোলেশনে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের নিয়মিত খোঁজখবর নেয়ার জন্য ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন আইজিপি। তাদের প্রার্থনা, বিনোদন ও বই পড়ার ব্যবস্থা করার জন্যও নির্দেশ দেন বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, শুধু আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের নয়, তাদের পরিবারেরও খোঁজখবর নিতে হবে, যেন তারা নিজেদের একা মনে না করেন।
পুলিশ প্রধান বলেন, এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদেরকে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদেরকে সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে এ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর এ ছুটির মেয়াদ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়, পরে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে চলমান সাধারণ ছুটি আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করেছে সরকার। এ সময়ে দেশবাসীকে নিজ বাড়িতে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
ছুটির সময়ে অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি সেবা এই বন্ধের বাইরে থাকছে। জনগণকে ঘরে রাখার জন্য মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও
Tag: others
No comments: