Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » একবেলা নুন-পান্তা খাওয়া পেসারই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে




রাজধানী থেকে দূরবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের এক গ্রাম। সেখানে শরিফুল ইসলাম নামের এক কিশোর প্রায়ই গভীর মনোযোগে পুকুরে মাছ শিকার করে দিন কাটাত। যত সময় বড়শির পেছনে দেয়া যায় ততই সম্ভাবনা বাড়ত বড় মাছ ধরা পড়ার, সঙ্গে বাড়ে ধৈর্য। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা সেই ধৈর্যই শরিফুলকে শিখিয়েছে একই লাইন-লেন্থে ক্রমান্বয়ে বল করে যাওয়া, আর চিনিয়েছে সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রধান কাণ্ডারি হওয়ার পথটি। বর্তমানে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের যে কয়জনকে ভাবা হচ্ছে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ, তাদের একজন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। লম্বা গড়নের এ পেসার যেমন একই জায়গায় টানা বল ফেলে ব্যাটসম্যানকে বিরক্ত করতে ওস্তাদ, তেমনি পারঙ্গম বাউন্সারে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতেও। অথচ ক্রিকেটার হওয়ার ভাবনা কিংবা ভবিষ্যৎ চিন্তা, কোনোটাই ছিল না শরিফুলের মনোজগতে। ২০১৬ সালে স্থানীয় এক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে টেপ টেনিসে তার বল করা দেখে মুগ্ধ হন রাজশাহীর স্বনামধন্য কোচ আলমগীর কবির। যার ডাকেই দিনাজপুর থেকে রাজশাহীতে আসা ১৮ বছর বয়সী শরিফের। ‘সমস্ত কৃতিত্ব আলমগীর কবির স্যারের। তিনিই আমাকে দিনাজপুর থেকে রাজশাহীতে নিয়ে আসেন।’ ক্রিকইনফোকে উঠে আসার গল্পটা এভাবেই শুনিয়েছেন শরিফুল। ‘কিন্তু আমার খেলার মতো কোনো সরঞ্জাম ছিল না। তিনিই আমার হাতে ভারত থেকে আনা নাইকির একজোড়া নতুন বুট তুলে দেন। সকালে শুধু আমাকে নিয়েই একটা আলাদা প্র্যাকটিস সেশন রাখতেন। বিকেল বেলা যত্ন নিতেন নিজের সন্তানের মতো।’ ‘স্যারের একাডেমিতেই আস্তে আস্তে আমার উন্নতি ঘটতে থাকে, খুব দ্রুত ডাক আসে রাজশাহীর বয়সভিত্তিক দলে। পরে ঢাকায় তৃতীয় বিভাগের দলে সুযোগ পাই, ২০১৭ সালে খেলি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে।’ প্রিমিয়ার লিগের সেই আসরে পাদপ্রদীপের আলোয় আসা শরিফুলের। ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। ওই সাফল্য খুলে দেয় বিপিএল ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের দুয়ার। বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের হয়ে অভিষেক। দলটির একাধিক বিদেশী তারকার পরামর্শ মিটিয়েছে কৌতূহলের খোরাক। ‘আমি আমার সবচেয়ে সেরা উইকেটটা পেয়েছিলাম বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে। আমরা শ্রীলঙ্কা এ-দলের বিপক্ষে খেলছিলাম। উইকেটে ছিল থিসারা পেরেরা। সে সবার বলেই পেটাচ্ছিল। আমি ভেবেচিন্তে একটা কাটার দিলাম, সে বোল্ড হয়ে গেল। আমরা শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতেছিলাম।’ ‘খুলনা টাইটান্সে অনেকটা সময় কাটিয়েছি কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ও ডেভিড মালানের সঙ্গে। তাদের কাছে যতটুকু সম্ভব জানার চেষ্টা করতাম। ব্র্যাথওয়েটের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কীভাবে নিজের সেরাটা দেয়া যায়। সেদিন আমাকে তিনি যে উত্তরটা দিয়েছিলেন, সেটা কোনোদিনই ভুলতে পারবো না। তিনি বলেছিলেন, নিজের আত্মবিশ্বাসটাই সব সাফল্যের চাবিকাঠি।’ বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন ‘তুমি যদি নিজে আত্মবিশ্বাসী হও, তবে ব্যাটসম্যানের মনোভাবটা পড়া তোমার জন্য সহজ হবে। যদি তুমি ভয় পাও, যতই ভালো হও না কেনো সাফল্য পাবে না।’ খেলার টাকায় বাবার জন্য গরুর ফার্ম করে দিয়েছেন শরিফুল, পঞ্চগড়ে বানাচ্ছেন নতুন বাড়ি। অথচ একটা সময় বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য তাকে সাইকেল চালিয়ে যেতে হয়েছে প্রতিবেশীর বাড়ি। সারাদিনে একবেলা পান্তাভাতের সঙ্গে লবণ-পেঁয়াজ মাখিয়ে খেয়ে চালিয়ে যেতে হয়েছে অনুশীলন। পরিবারের খুব একটা ইচ্ছা ছিল না ক্রিকেটার হন শরিফুল। তাদের কাছে এটা ছিল আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখার মতো, ‘আমার বাবা-মা চাইতেন না আমি ক্রিকেটার হই। তারা বলতেন, তুমি পারবে না। প্রথম ২-৩ মাস আমাকে কোনো সাহায্যই করেননি তারা, কেবলমাত্র আমার ভাই ছাড়া।’ ‘আমার ভাই আমাকে বলেছিলেন, দরকার হলে গায়ের রক্ত বিক্রি করে তোকে খেলাবো। চিন্তা করিস না। এরপর আবাহনীর হয়ে ৪ উইকেট পাওয়ার পর টিভিতে একদিন বাবা-মা আমার সাক্ষাৎকার দেখতে পান। তখনই তারা প্রথম উপলব্ধি করেন যে, বড়কিছু হওয়ার সামর্থ্য আমার আছে।’ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২২.৫০ ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২৪.৯৩ গড়ে উইকেট নিয়েছেন শরিফুল। তার পেস বোলিংয়ের সামর্থ্যের পেছনে জেলা পর্যায়ে ভলিবল খেলার অভিজ্ঞতাকেই মূল কারিগর মনে করেন। ‘ভলিবল খেলার কারণে আমি লাফিয়ে বল ডেলিভারি দিতে পারি। কাঁধ থেকে যে শক্তি আসে তার পেছনে আসল রহস্য ভলিবল।’ মিচেল স্টার্কের ভীষণ ভক্ত শরিফুল। বাংলাদেশিদের মধ্যে আদর্শ মোস্তাফিজুর রহমান, ‘মোস্তাফিজ ভাইকে দেখে আমার মনে হয়েছিল তার মতো ঢ্যাঙ্গা স্বাস্থ্যের কেউ যদি পেস বোলার হতে পারে, আমি পারবো না কেন? যখন তার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়, জিজ্ঞেস করেছিলাম, কঠিন সময়ে আপনি কী করেন? তিনি বলেছিলেন, খারাপ সময়ে অনেকে অনেককিছু বলবে। সময়টাতে তোকে যে টেনে তুলতে পারবে সে হল আয়নার ওপাশে দাঁড়ানো মানুষটা!’ বেশ লম্বা সময় ধরেই পেস বোলার সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। কেবল মোস্তাফিজ ও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ছাড়া কেউ স্থায়ী হতে পারেননি জাতীয় দলে। বয়সভিত্তিক, ঘরোয়া ক্রিকেটে যে ঝলক দেখিয়েছেন শরিফুল, সেটা যদি দেখাতে পারেন জাতীয় দলে এসে, তবে বাংলাদেশ একজন দীর্ঘ ঘোড়ার পেস বোলিং রত্ন পেতে যাচ্ছে সেটা বলাই যায়।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply