কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু জাহাজ কর্ণফুলির
বিলাসবহুল জাহাজ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন সমুদ্রভ্রমণ পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এখন থেকে পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিগামী এম ভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামের এই বিলাসবহুল জাহাজটি আজ বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন নৌ- পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স (লি.) এর পরিচালনায় জাহাজটির সার্বিক সহযোগিতা এবং তত্ত্বাবধানে থাকছে ফারহান এক্সপ্রেস ট্যুরিজম। কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দর সড়কের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে এই জাহাজটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নৌ-সচিব এম এ সামাদ।
উদ্বোধনের পর অতিথিরা স্বল্প সময়ে ওই জাহাজে করে সমুদ্রযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় জেটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের দাবি দীর্ঘদিনের। অবশেষে এই দাবি পূরণের মাধ্যমে পর্যটকরা কক্সবাজার শহর থেকেই প্রথমবারের মতো সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। জাহাজটি প্রতিদিন সকাল সাতটায় কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেবে এবং বিকেল তিনটায় ফিরবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সূত্র মতে, ভ্রমণপিপাসু মানুষের আরামদায়ক ভ্রমণে এবার নতুন সংযোজন এই এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস। এতোদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা টেকনাফ থেকে পাঁচটি জাহাজে (কেয়ারি বে ক্রুজ এন্ড ডাইন, কেয়ারি সিন্দাবাদ, এম ভি বে ক্রুজ-১,দ্যা আটলান্টিক ক্রুজ, এম ভি ফারহান) করে সেন্টমার্টিন যেতেন। এবার সেন্টমার্টিন ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করতে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।
সূত্রে আরও জানা যায়, কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামের বিলাসবহুল জাহাজটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপইয়ার্ডে বিআইডব্লিউটিসির উপকূলীয় জাহাজ বহরের লিজেন্ডারি নৌযান এমভি আলাউদ্দিন আহমেদ নামে পরিচিত ছিল। যা বর্তমানে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামে নতুনভাবে রূপান্তরিত হয়েছে।
ফারহান এক্সপ্রেস ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর আরও জানান, নৌযানটি আগে চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে হাতিয়ার নলচিরা হয়ে সন্দ্বীপে চলাচল করতো। বর্তমানে জাহাজটির মালিকানা কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড অধিগ্রহণ করে। পরে ডিজাইন ফার্ম এসএসটি মেরিন সল্যুশনের মাধ্যমে নকশা পরিবর্তন করে।
এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেসকে নিজস্ব ডকইয়ার্ডে নতুনভাবে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। পুরোপুরি প্রস্তুত নৌযানটি সার্ভিসে যাওয়ার আগে সি ট্রায়ালের অংশ হিসেবে কর্ণফুলী নদী থেকে পতেঙ্গার সমুদ্র মোহনা পর্যন্ত ট্রায়াল সম্পন্ন করে।
প্রায় ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১১ মিটার প্রশস্ত নৌযানে মেইন প্রপালেশন ইঞ্জিন হচ্ছে দু’টি। আমেরিকার বিখ্যাত কামিন্স ব্র্যান্ডের একেকটির ক্ষমতা প্রায় ৬০০ বিএইচপি করে। জাহাজটি ঘণ্টায় প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে ছুটতে পারে। ১৭টি ভিআইপি কেবিন সমৃদ্ধ এটি। নৌযানে তিন ক্যাটাগরির প্রায় ৫০০ আসন রয়েছে। রয়েছে কনফারেন্স রুম, ডাইনিং স্পেস, সি ভিউ ব্যালকনি।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স (লিমিটেড) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ।
পরবর্তীতে জাহাজটির ভাড়ার তালিকা ও সময়সূচি প্রকাশ করা হবে বলে জানান ফারহান এক্সপ্রেস ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজে করে যাওয়া যাবে এমন সংবাদে পর্যটকদের মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করেন এখন থেকে খুব সহজে এবং কম খরচে সরাসরি সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করা যাবে। অপরদিকে প্রকৃতিকে উপভোগ করা যাবে আরও নিবিড়ভাবে।
উল্লেখ্য, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। আবার কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। পাহাড় সমুদ্র বরাবরই টানে পর্যটকদের। সাগরের বিশালতার কাছে গেলেই প্রকৃতি নিজের মনকে আরও আপন করে নেয়।
Tag: others
No comments: