পর্যটন মহাপরিকল্পনায় বদলে যাবে দেশ: পর্যটন প্রতিমন্ত্রী
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী বলেছেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৫০ বছর। দীর্ঘ এ সময়ে পর্যটন শিল্পে আমরা আশানুরূপ এগিয়ে যেতে পারি নাই। তাই অনেক প্রতিকূলতা নিয়ে আমরা একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করছি। এই পর্যটন মহাপরিকল্পনায় বদলে যাবে দেশের পর্যটন শিল্পের চিত্র।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশের পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের নতুন যুগে প্রবেশ করবে। এ খাতে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ব্যাপক সম্ভাবনার সূচনা হবে, বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হবে।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারার সাথে তাল মিলিয়ে পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের পর্যটন খাত কে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরকে উদ্যমী হতে হবে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনকে পর্যটন উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব দিতে হবে, তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে হবে। গতানুগতিক কাজ করে পর্যটনের উন্নয়ন করা যাবেনা। আমরা চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন।
মাহবুব আলী বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন মহাপরিকল্পনা একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এতে সকলের অংশগ্রহণ জরুরি। মহাপরিকল্পনাটির অংশীদার সমগ্র জাতি। সরকারী-বেসরকারী সকল স্টেকহোল্ডারকে এ কাজে আন্তরিকভাবে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করছি। আশা করি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে একটি সমৃদ্ধ এবং প্রয়োগযোগ্য ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান তৈরী হবে বাংলাদেশের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের “সোনার বাংলা” বিনির্মাণে পর্যটন শিল্প তার ভূমিকা যথাযথ ভাবে পালন করবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটনে উন্নত দেশগুলোর সমকক্ষ হতে হলে আমাদের সুচিন্তিত ভাবে কাজ করতে হবে। পর্যটকদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। পর্যটক বৃদ্ধি বা হ্রাসের কারণ নির্ণয় করা জরুরি। আমাদের ট্যুরিজম মাস্টার প্লানে সেই নির্দেশনা থাকবে, একই সাথে এ থেকে উত্তোরনের পথও চিহ্নিত করা হবে। পর্যটন উন্নয়নের সাথে আমাদের অনেক সেক্টরের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। পর্যটন উন্নয়ন হলে পরিবহন সেক্টর, হোটেল মোটেল, রেস্টুরেন্ট, কারুপণ্য ইত্যাদি বিকশিত হবে। কর্মসংস্থান হবে বিপুল সংখ্যক মানুষের।
পর্যটন মহাপরিকল্পনা তিনটি পর্যায়ে তৈরী হবে জানিয়ে মাহবুব আলী বলেন, প্রথম পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হবে দেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, এর শক্তি কতটুকু, দুর্বলতা কোথায়, সম্ভাবনা কেমন, কোন ধরনের সংকট রয়েছে। দেশের পর্যটন উন্নয়নের জন্য সকল পর্যটন আকর্ষণ ও পর্যটন সম্পদ চিহ্নিত করা হবে। তদুপরি বেসরকারি অংশীজনের সাথে বৈঠক করা হবে এবং মতামত নেয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে বাংলাদেশের পর্যটনের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজিক অবজেক্টিভস, প্রায়োরিটিস এবং লিংকেজ। এ পর্যায়ে বাংলাদেশের পর্যটন উন্নয়ন, প্রমোশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩, ৫ এবং ১৫ বছর মেয়াদী স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে জোন বা এরিয়া নির্দিষ্ট করে অঞ্চল ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। প্রোডাক্ট উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হবে। অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। বিপণন ও প্রমোশনাল কৌশল নির্ধারণ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি তে পর্যটনের অবদান মাত্র ২ শতাংশ। আসছে বছরগুলোতে একে ১০ শতাংশে উন্নীত করতে পর্যটন মহাপরিকল্পনা সহায়ক ভূমিকা রাখবে। মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হবে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা হতে। পর্যটন মহাপরিকল্পনার কাজ অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে যাতে সবাই তা জানতে পারে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডঃ ভুবন চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পর্যটন মহাপরিকল্পনার উপর আরো বক্তব্য রাখেন পরামর্শক দলের প্রধান বেঞ্জামিন কেরি ও ডেপুটি টীম লিডার অধ্যাপক নুরুল ইসলাম নাজিম।
Tag: politics
No comments: