ফেসবুকের কল্যাণে ৪৮ বছর পর পাওয়া গেলো তাকে
রিপ ভ্যান উইঙ্কলের গল্প মনে আছে? পাহাড়ে শিকার করতে গিয়ে বিশেষ এক পানীয় খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যখন চেতনা ফিরে পেলেন জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। পরিবারে ফিরে জানতে পারেন তার স্ত্রী বেঁচে নেই। ছেলেমেয়েরা সব বড় হয়ে গেছে। এরচেয়েও আশ্চর্যের ঘটনা ঘটে গেলো বাস্তব জীবনে। প্রায় অর্ধ-শতাব্দী নিখোঁজ থাকার পর এক ব্যক্তিকে খুঁজে পেলো পরিবার। তাও কিনা ফেসবুকের কল্যাণে!
র বিয়ানীবাজারের মাথিউরা বেজগ্রামের যুবক হাবিবুর রহমান প্রায় ৪৮ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলেন। এখন তিনি ৭৮ বছরের বৃদ্ধ। পরিবার তাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিল। ফেসবুকের কল্যাণে প্রায় ৪৮ বছর পর নিজের পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন হাবিবুর। সন্তানরাও ফিরে পেয়েছে তাদের বাবাকে।
হারিয়ে যাওয়ার সময় হাবিবুর রহমানের পরিবারের অবস্থা ভালোই ছিল। স্বামীর রেখে যাওয়া জমিজমা দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন স্ত্রী জয়গুন নেছা। চার ছেলেই বিয়ে করেছেন, আছে নাতি-নাতনি। তবে, অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকা জয়গুন মারা যান ২০০০ সালে।
স্বজনরা জানান, হাবিবুর রহমান রড সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। ১৯৭২ সালের শেষ দিকে তিনি চট্টগ্রামের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ব্যবসায়িক কাজে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজার পর তার সন্ধান পায়নি।
মূলত, ফেসবুকে এক ভিডিওর মাধ্যমে শুক্রবার বিকেলে হাবিবুর রহমানের সন্ধান পান সন্তান আর নাতিরা। এতে নাতিদের আনন্দ যেন একটু বেশিই। জানালেন, ছোটবেলা থেকে দাদার গল্প শুনছিলেন বাবা চাচাদের কাছ থেকে। হঠাৎই হারিয়ে যাওয়া দাদা ফিরে এসে তাদের জীবনে আনন্দের সঞ্চার করেছে।
বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান এখন মানসিকভাবে অনেকটা ভারসাম্যহীন। গত ১২ বছর থেকে মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজারের পাশের রায়েশ্রী গ্রামের রাজিয়া বেগম নামের এক নারী হাবিবুর রহমানকে নিজের বাবার মতো দেখাশোনা করতেন। ২২ দিন আগে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের হাত ভেঙ্গে গেলে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসেন রাজিয়া বেগম। এই বয়স্ক মানুষকে কীভাবে হাসপাতালে ফেলে যাবেন, পাশের বেডের রোগীর স্বজনদের সাথে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন রাজিয়া। ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করলে তার ছেলেরা শুক্রবার সিলেট ওসমানী হাসপাতালে এসে তাকে শনাক্ত করে। ওসমানী হাসপাতাল থেকে বাবাকে নিয়ে যান নগরীর আল-হারামাইন হাসপাতালে।
হাবিবুরে ছেলে জালাল উদ্দিন জানান, অনেক অনেক বছর পর ওনাকে দেখেছি। ওনার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি উনি আমার পিতা হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, বাবা ৪৮ বছর আগে চট্টগ্রামে যান ব্যবসা করতে। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এরপর থেকে হাবিবুর রহমানের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
হাবিবুর রহমানের ২ ছেলে রয়েছেন লন্ডনে। পিতাকে ফিরে পাবার খবরে তারাও ছুটে আসছেন দেশে। এ যেন গল্পকেও হার মানানো এক বাস্তবতা
No comments: