Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের জীবনাদর্শ সমাজে ছড়িয়ে দিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে




মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের জীবনাদর্শ সমাজে ছড়িয়ে দিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে ----------------------------------------------------------------------------- মুহাম্মদ রবীউল আলম..

ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে মুসলিম পুনর্জাগরণে যে ক’জন মনীষী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন (১৮৭০-১৯৩৭) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এ দেশের মুসলমানরা যখন ইতিহাস-ঐতিহ্য বিস্মৃত, সামাজিক ক্ষেত্রে অবহেলিত তখন খৃস্টান পাদ্রীরা তাদেরকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে বিপথগামী করে তুলেছিল। এ সময়ে মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন তাঁর লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে বিপথগামী মুসলমানদেরকে বিপথগামিতার পথ থেকে ফিরিয়ে আনার কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করেন। আগামীকাল ২৯ জানুয়ারি ২০২০ সাল। মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের ১৫০তম জন্মবাষিকী। জন্মবাষিকীর এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি সেই মহান খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও সমাজসেবক মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনকে। তিনি এই অজপাড়া গাঁ থেকে আধুনিক উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এই উপমহাদেশের ইসলামী আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর এই ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন একজন খ্যাতনামা ধর্ম প্রচারক, লেখক ও সমাজসেবক। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাঁড়াডোব গ্রামে ১৫ মাঘ, ১২৭৭ (১৮৭০) জন্মগ্রহণ করেন। নিষ্ঠাবান মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। বাল্যকালে তিনি নামাজ-রোজা ইত্যাদি ইসলামিক বিধিবিধান নিয়মিতভাবে পালন করেন । কিন্তু কৃষ্ণনগর নার্মাল স্কুলে পাঠকালে খ্রিস্টান মিশনারিদের সংস্পর্শে এসে তিনি ১৮৮৭-তে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন । নর্মাল পাঠ সমাপ্ত করে খ্রিস্টান পাদ্রিদের সহায়তায় তিনি ১৮৯১-তে এলাহাবাদ সেন্ট পলস ডিভিনিটি কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজ থেকে তিনি প্রথম বিভাগে হায়ার গ্রেড অব থিয়লজি ডিগ্রি লাভ (১৮৯৩) করেন এবং কলকাতা ক্যাথিড্রাল মিশন ডিভিনিটি কলেজে কিছুকাল অধ্যয়ন করেন । এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নকালে তিনি খ্রিস্টধর্ম তত্ত্ব এবং সংস্কৃত, আরবি, গ্রিক, হিব্রু ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা গ্রহণ করেন । প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন । কিছুকাল পরে বাইবেলের অকৃত্রিমতা সম্বন্ধে মনে সংশয় দেখা দেয়ার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করে মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন আবার ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন । এরপর তিনি নিজ গ্রামের স্কুলে শিকতার কর্মে যোগদান করেন এবং কিছুকাল পর এ কর্ম ত্যাগ করে মুুন্সী মেহেরুল্লাহর সহচর হিসেবে ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। খ্রিস্টান মিশনারিরা ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করে যে সব পুস্তক -পুস্তিকা প্রকাশ করেন তার প্রতিবাদে পুস্তক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন । মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন মুসলমানদের জন্য স্বাতন্ত্রধমী ধারার অনতম শক্তিশালী লেখক ছিলেন । এই ধারার লেখকদেরকে ‘ সুধাকর দল’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। শেখ জমিরউদ্দীন ইসলামের সেবায় জীবনী সংকলন, অনুবাদ, কবিতা,গজল, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও বিধমীদের আক্রমণের বিরুদ্ধে গ্রন্থাবলী রচনা করেন এবং বাংলা- আসামের জেলায় -জেলায় বক্তৃতা দিয়ে বাঙালী মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক অবদান রাখতে সক্ষম হন। শেখ জমিরউদ্দীনের রচনাবলী তৎকালীন বিভিন্ন ইসলামী পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে রয়েছে। ইসলামের সত্য ও সৌন্দর্যের অন্বেষণই তাঁর লেখার বিষয়বস্তু। গ্রন্থ: আমার জীবনী ও ইসলাম গ্রহণ বৃত্তান্ত (১৩০৪), হজরত ইসা কে? (১৩০৬), ইসলামী বক্তৃতা (১৩১৪), মেহের-চরিত (১৩১৫), রদ্দে খৃষ্টান (১৪টি পুস্তিকা), শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরীর ধোকাভঞ্জন (১৩২৩), আসল বাইবেল কোথায়? (১৩২৭)’ ইঞ্জিলে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরী ওয়েঙ্গার সাহেবের সাক্ষ্য (১৩২৩), রদ্দে সত্য ধর্ম নিরূপন ও হেদায়েতুল ইসলাম (১৩৩২), পাদরী মনরো সাহেবের ধোঁকা ভঞ্জন (১৩৩৪), ইঞ্জিলে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরী রাউস সাহেবের সাক্ষ্য (১৩৩২), মাসুম মোস্তফা (সাঃ), হযরত ইসহাক (আঃ), হযরত বার্নার ইঞ্জিলে পেশ খবর,ইসলামের সত্যতা সম্বন্ধে পরধর্মাবলম্বীদিগের মন্তব্য (১৩০৭) এষড়ৎু ড়ভ ওংষধস (১৯২৯), শোকানল (কাব্যগ্রন্থ ১৩১৬) কোথা চলি গেলে (কাব্যগ্রন্থ ১৩০৮), আসল বাংলা গজল(১৯১৫), ইসলামী সভ্যতা, জঙ্গে কারবালা (১৯০৪), ‘জওয়াবান্নাছায়া’, গৌড়ের ইতিহাস , বিশুদ্ধ খতনামা (১৩৩৪), পদ শিক্ষা ব্যাকারণ (১৮৯৭), উপদেশ ভান্ডার, দুইশত উপদেশ , খোশ গল্প ইত্যাদি। মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের জীবনী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ মেহের-চরিত (১৩১৫)। তিনি এই গ্রন্থে অত্যন্ত সহজ ভাষায় মুন্সী মেহেরুল্লার জন্ম, বাল্য ও কর্মজীবন এবং মুসলিম জাগরণে তাঁর অবদান চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। মুন্সীজীর আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘আমার জীবনী ও ইসলাম গ্রহণ বৃত্তান্ত ’(১৩০৪)। এই গ্রন্থে তিনি কিভাবে খৃষ্টানদের প্রলোভনে পড়ে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন এবং অবশেষে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ইসলাম ধর্মে ফিরে আসেন তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো তিনি খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সজাগ করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। যা আজকের সমাজে পুনপ্রকাশ করা খুবই জরুরী। মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন ইসলাম ধর্মের একজন বিশিষ্ট প্রচারক ও সেবক। তিনি তেজস্বী ওয়াজকারী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ইসলামের আদর্শ প্রচার ও খৃষ্টান ধর্মের অসারতা প্রমাণ করে তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ঐসব গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি মুসলমান সমাজকে রক্ষা করার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা খুবই উল্লেখযোগ্য। এ অঞ্চলের মুসলিম সমাজ তার কাছে চিরঋণী। মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন সম্পর্কে আমার বিশেষ আগ্রহ কলেজে অধ্যায়ন করার সময় থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তাঁর সম্পর্কে পড়াশনা করতে থাকি এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে থাকি। এম.এ. শেষ বর্ষে থিসিস পেপার হিসেবে মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে একটি পান্ডুলিপি জমা দিই। পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তা গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করে। পরবর্তি পর্যায়ে আরও কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজ পর্যন্ত মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন রচনাবলী প্রকাশিত হয়নি। এব্যাপারে আমাদের সকলে এগিয়ে আসা উচিৎ। মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের ১৫০তম জন্মবাষিকী উদযাপন উপলক্ষে একটি পুস্তিকা প্রকাশ এবং একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে জেনে আমি খুশি হয়েছি। আমি এজন্য বিশিষ্ট সাংবাদিক , মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন গবেষক ও তাঁর স্মৃতি সংরক্ষক এস এম আইনুল হক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আজকের সমাজে মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের মতো আধুনিক উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী এবং ইংরাজী,আরবী, সংস্কৃত, গ্রিক ও হিব্রু ভাষায় বিশেষ পারদর্শী ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। এই সমাজে মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীনের মতো ব্যক্তিদের বড় প্রয়োজন। আসুন আমরা এই মহান ব্যক্তির জীবনাদর্শকে অনুসরণ করি এবং তাঁর আদর্শকে সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। মুহাম্মদ রবীউল আলমঃ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক। তিনি ‘মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন জীবন ও সাহিত্য’(১৯৯৪) গ্রন্থের লেখক।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply