গাইবান্ধা জেলার পাঁচ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রক্ষপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি কিছুটা কমলেও বিপদসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গত সাতদিনে প্লাবিত হয়েছে জেলার একটি পৌরসভা ও ৩৭টি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৪ লাখ মানুষ। পানিবন্দি এসব মানুষ কোন রকমে আশ্রয় নিয়েছেন উচু জায়গা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এখন অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ব্রক্ষপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৪৪ সে. মি ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৮৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রক্ষপুত্রের পানি ৬ সে. মি ও ঘাঘট নদীর পানি ১০ সে. মি কমেছে।
এদিকে পানির প্রবল চাপে ধ্বসে গেছে ব্রক্ষপুত্র ও ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ছয়টি জায়গা। জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর যোগাযোগের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাচা-পাকা সড়ক এবং ব্রিজ-কালভার্ট ধসে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেক এলাকায় যোগাযোগের একমাত্র ভরসাই নৌকা আর ভেলা।
আবার সাদুল্যাপুর-গাইবান্ধা, গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কসহ কয়েকটি সড়কের ওপর পানির ঢলের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধা-সান্তাহার রেল রুটের বাদিয়াখালি এলাকার রেল লাইনের ওপর দিয়ে তীব্র স্রোতে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে রেল লাইনের স্লিপার, পাথর সড়ে যাওয়ায় এক কিলোমিটার এলাকার রেল লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে, বন্যার পানিতে ডুবে সদর ও সাঘাটা উপজেলায় শিশুসহ দুইজন মারা গেছেন। পানি ওঠায় এবং ভবন ক্ষতিগ্রস্তের কারণে বন্ধ রয়েছে আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। তবে পানিবন্দি প্রায় ৪ লাখ মানুষের অধিকাংশের মাঝে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। কর্মহীন এসব মানুষের ঘরে খাবার না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আটদিন ধরে পানিবন্দি থাকায় দুর্গত এলাকায় বেড়েছে জনদুর্ভোগ। দূর্গত এলাকার মানুষের মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা অব্যহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল্যর অভিযোগ দুর্গত মানুষদের। ত্রাণ না পেয়ে অনেকটা দুর্ভোগে দিনাতিপাত করলেও কেউ তাদের খোঁজ রাখেনি বলেও অভিযোগ তাদের। তবে দুর্ভোগ লাগবে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন দুর্গত লাখ লাখ মানুষের।
তবে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। ব্রিফিংয়ে বন্যায় পানিবন্দি পরিবার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও তাদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
প্রেস ব্রিফিং এ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেবুন নাজার জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য সরকারীভাবে ১৬৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্প খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৭১ হাজার ২৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গত মানুষের জরুরী স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে গঠন করা হয়েছে ৭৫টি মেডিকেল টিম। দুর্গতদের দুর্ভোগ লাগবে সরকার ৯৫০ মে. টন চাল, ৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও সাড়ে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ উপজেলার দুর্গত মানুষের মধ্যে ৫৮৫ মে. টন চাল, ৪ হাজার শুকনা খাবার প্যাকেট ও নদগ সাড়ে ৬ লাখ টাকা বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
ত্রাণ অপ্রতুল্য ও বানভাসীদের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, সরকারী বরাদ্দের মজুদ থাকা চাল, টাকা ও খাবার প্যাকেট দুর্গতদের মধ্যে বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে লোকবল ও দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া তাদের জন্য নতুন আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা যথেষ্ট আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি দুর্গত মানুষদের জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের বন্যা পরিস্থিতির সঠিক তথ্য চিত্র তুলে ধরার আহবানও জানান তিনি।
এছাড়া প্রেস ব্রিফিং এ জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সাদুল্যাপুর উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া জমির ফসল ও পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়াসহ অনান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তুলে ধরা হয়। জেলার পাঁচ উপজেলায় চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪০টি। এসব পরিবারের ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে পাঁচ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার রয়েছে ফুলছড়ি উপজেলায়। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ১৪২টি। ক্ষতিগ্রস্ত টিউবয়েলের সংখ্যা ২ হাজার ৬৪০টি। কাঁচা রাস্তা ৫১৭, পাকা রাস্তা ১৮৭ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ৫৭ কিলোমিটার এবং ১৮টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া পাঁচ উপজেলার বির্স্তীণ এলাকার বিজতলা, পাট, সবজি ক্ষেতসহ পানির নিচে নিমজ্জিত জমির বিভিন্ন ফসলের পরিমাণ ৯ হাজার ৮২১ হেক্টর। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ২ হাজার ৯৪১টি পুকুরের মাছ। বন্যার পানিতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৩০৯টি। এছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ১৩ টি এবং অনান্য প্রতিষ্ঠান ১৬টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় পানিতে ডুবে সদর উপজেলায় এক শিশু ও সাপের কামড়ে সাঘাটা উপজেলায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছ বলেও প্রেস ব্রিফিং এ উল্লেখ করা হয়।
Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: