প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের নির্দেশ
ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে দায়ের করা এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারিসহ দুইদিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
হাইকোর্ট বলেছেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক (ডিজি) সার্কুলার জারি করবেন। দুইদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ জন্য প্রতি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেবেন তিনি।
চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক, জনপ্রশাসন সচিবসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে হবে।’
এর আগে গত ২২ এপ্রিল ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে ‘সুপারবাগস লিংকড টু এইট আউট অব টেন ডেথস ইন বাংলাদেশ আইসিইউ-স’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ রোগীর মৃত্যুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী সুপারবাগ দায়ী।
এরপরই আদালতে রিট আবেদন করেন আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন। রিটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা হয়, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে এক কোটিতে।
পশু খাদ্য, মাছ এবং কৃষিতে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিতে, যা দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের প্রায় অর্ধেক। ফলে খুব সহজেই কৃষি খাদ্যের মধ্য দিয়ে এই অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীর ঢুকছে। এতে একদিকে যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে, তেমনি শরীরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে।’
আবেদনে আরো বলা হয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা যে নষ্ট হয় বা হুমকি তৈরি করে, সে বিষয়টি তুলে ধরতে জাতীয় ওষুধ নীতি ব্যর্থ হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার মানুষের মৃত্যুফাঁদ তৈরি করছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এই ফাঁদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা।
No comments: