ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে : ড. কামাল

দেশজুড়ে নারীর ওপর সহিংসতা-নির্যাতন বাড়ছেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিপীড়কদের আরো বেশি করে উসকে দিচ্ছে। ফলে পথে-কর্মস্থলে এমনকি বাসাবাড়িতেও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে নারীরা। এ অবস্থায় নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে জনগণকে সক্রিয় করতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলের চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে এমন ঘোষণা দেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গোটা দেশে নারী ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি খুবই দৃশ্যমান। আমরা মনে করি যে, নারী ধর্ষণ ও নারীর ওপর নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনকে আরো জোরদার করতে হবে। আইনের শাসন, নারীদের অধিকার রক্ষা করার জন্য জনগণকে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামতে হবে। এ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি যে, এ অবস্থার বিরুদ্ধে সক্রিয় ও সম্মিলিতভাবে মাঠে নামব। কারণ মানুষ চায় সভ্যতা ফিরে আসুক, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক। আমরা এ লক্ষ্যে আজকের বৈঠকে কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মনে করি ঐক্যবদ্ধ একটা উদ্যোগ নিয়ে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা এখন জরুরি হয়েছে পড়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক অভিযোগ করে বলেন, যারা মানুষের বিরুদ্ধে, নাগরিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে তাদের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করছি। যারা মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, পুলিশ তাদের ব্যাপারে তৎপরতা দেখাচ্ছে। পরে ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিসহ সব নারীর ওপর ধর্ষণ-নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে আগামী ৩০ এপ্রিল ঢাকায় জমায়েতের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আ স ম আবদুর রব বলেন, নুসরাত হত্যাসহ নারী ও শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আগামী ৩০ এপ্রিল আমরা ঢাকার শাহবাগে বিকেল ৪টায় জমায়েত করব। এ ছাড়া গণশুনানির অংশ হিসেবে আমরা নোয়াখালী ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে যাব। নোয়াখালী ও রাজশাহী দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হবে। এর দিনক্ষণ আমরা পরে জানাব। একইসঙ্গে রমজানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঢাকায় একটি নাগরিক সমাবেশ করবে বলেও জানান রব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে রব বলেন, আজকে হয়রানিমূলক মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নিঃশর্তভাবে তাঁর মুক্তি চাই। খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আছেন উল্লেখ করে জেএসডির সভাপতি বলেন, সবাইকে মুক্তি দিতে হবে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে সব মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও গায়েবি মামলা দায়ের বন্ধ করতে হবে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদের জামিনে মুক্তি দিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে আ স ম আবদুর রব বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কেউ সংসদে শপথ নেবে না। আমাদের এই সিদ্ধান্ত অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের দুই নির্বাচিত সাংসদের শপথগ্রহণ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রব বলেন, যারা শপথ নিয়েছে তাদের দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ড. কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে আ স ম আবদুর রব ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়া, আ ম সা আমিন, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আলতাফ হোসেন, মফিজুল ইসলাম খান কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।