হঠাৎই আগুন। চারপাশে ধোয়ার কুণ্ডলী, পোড়া গন্ধ আর চিৎকার-চেচামেচি। ভয়ংকর এই দুর্যোগে নিজেদের জীবন বাজি রেখে এক হাজারেরও বেশি রোগীকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আগুনের পর প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সাহসিকতার গল্প এখন সবার মুখে-মুখে। প্রশংসায় ভাসছেন সবাই। এদিকে দুর্যোগ কাটিয়ে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবারো স্বরূপে ফিরতে শুরু করছে হাসপাতালটি।
কিছু গল্প হার মানায় উপন্যাস কিংবা সিনেমা। কিছু চরিত্র সেলুলয়েডের পর্দা থেকে বেড়িয়ে আসে আমাদের চারপাশে। নিন্দুককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রেখে যায় মানবিকতার অনন্য নজির।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দেবাশীষ যেন ঠিক তেমনই একজন। বৃহস্পতিবার যেদিন আগুন লাগে তখন গুরুতর এক রোগীর অস্ত্রোপচার করছিলেন তিনি। আগুনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও থামাননি অস্ত্রোপচার। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে দক্ষতার সঙ্গে শেষ করেন অপারেশন। তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্রেচার না পেয়ে জ্ঞানহীন রোগীকে নিজেই কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নিরাপদ আশ্রয়ে।
সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দেবাশীষ বলেন, যে মুহূর্তে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। ও মুহূর্তে আমরা অপারেশনের একদম শেষ পর্যায়ে ছিলাম, আমরা শুধু চেক করতেছিলাম এখানে কোনো ব্লিডিং আছে কিনা। তখন আমাদের যে সহযোগী ডাক্তার ছিল, তিনি মোবাইল দিয়ে আলো জ্বালে এবং সেই আলোতে আমরা ব্যান্ডেজটা কমপ্লিট করি।
এমন আরো গল্প সেদিন ছড়িয়ে ছিল সোহরাওয়ার্দীর প্রতিটি কোণায়। বীরত্বের সকল গল্পকে যেন হার মানায় চিকিৎসকদের কাছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই বন্ধ হয়ে যায় আইসিইউ'র অক্সিজেন সরবরাহ। মাত্র তিন মিনিটেই যেখানে রোগীর জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে এমন চ্যালেঞ্জে স্টোর রুমের দরজা ভেঙে বের করে আনেন অক্সিজেন সিলেন্ডার।
ডাক্তারা জানান, তিন মিনিট একটা রোগীর জন্য সবচেয়ে বেশি সংকটকালীন মূহূর্ত। এই তিন মিনিট রোগীটাকে যদি অক্সিজেন বা বাতাস সাপ্লাই করতে না পারি। তাহলে সে মানুষটা বাচতে পারবে না। এই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি, এটা বেঙে যদি যন্ত্রপাতি গুলো না বের করা হতো। তাহলে আমার মনে হয় সব রোগী মারা যেত।
রোগীদের শুধু নিরাপদে সরিয়ে এনেই দায়িত্ব শেষ করেননি চিকিৎসকরা। অন্য হাসপাতালে হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত খোলা মাঠে সেবা দিয়েছেন সাধ্যমতো। সেদিনের বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি দেয়ার কথা ভাবছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পেশাদারিত্বের পাশাপাশি মানবিকতার এই নজির প্রেরণা যোগাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে।
No comments: