বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ (শুক্রবার) রাত ১১টার কিছু পরে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আল মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী, কবি আবিদ আজম জানান, আল মাহমুদ রাত ১১টা ৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে রাত সোয়া ১০টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। নিউমোনিয়াসহ বার্ধ্যক্যজনিত নানা জটলিতায় ভুগছিলেন তিনি।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হন। হাসপাতালে ভর্তির পর কবিকে প্রথমে সিসিইউতে ও পরে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে তিনি অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল হাইয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
ড. আবদুল হাই জানান, "কবির নিউমোনিয়া বৃহস্পতিবার থেকে বেড়ে গিয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে প্রেসার কমে যেতে শুরু করে। তবে ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এরপর রাতে হঠাৎ করে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তখন হার্ট বিট বন্ধ হয়ে যায়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে প্রেসার মেইনটেন হয় না। তখন ব্রেইন, কিডনি অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হলে মানুষ ক্লিনিক্যালি মারা যায়। তারও সেটাই হয়েছে।"
আল মাহমুদ
কবি আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাকভঙ্গিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক তিনি।
আল মাহমুদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি ব্যবসায়ী পরিবারে ১১ জুলাই ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ২১ বছর বয়স পর্যন্ত এ শহরে এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত জগতপুর গ্রামের সাধনা হাইস্কুলে এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। এ সময়েই লেখালেখি শুরু।
তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার ৩০ দশকীয় ভাবধারায় ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ দৃৃশ্যপট, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের কর্মমুখর জীবনচাঞ্চল্য ও নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহের বিষয়কে অবলম্বন করে আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামোয় অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় আঞ্চলিক শব্দের সুন্দর প্রয়োগে কাব্যরসিকদের মধ্যে নতুন পুলক সৃষ্টি করেন।
তিনি ১৯৭১-এর স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সদ্যস্বাধীন দেশে সাহসী দৈনিক গণকণ্ঠের সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছিলেন দৈনিক কর্ণফুলীর সম্পাদক। ১৯৭৫-এ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে যোগদান করেন। পরে ওই বিভাগের পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে অবসর নেন। কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই মিলিয়ে শতাধিক বইয়ের রচয়িতা তিনি। লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬) ইত্যাদি আল মাহমুদের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ডাহুকী, কবি ও কোলাহর, নিশিন্দা নারী উপন্যাস লিখেছেন আল মাহমুদ। তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত ও গন্ধবণিক ।
আল মাহমুদ সাহিত্যকর্মের জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, জয়বাংলা পুরস্কার, হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, সুফী মোতাহের হোসেন স্বর্ণপদক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।#
No comments: