দিল্লির পথে ঘুরে ঘুরে এক টাকায় গিটার, বাঁশি শেখান ইঞ্জিনিয়ার যশবীর রাও। ভোর হলেই প্রতিদিন গিটার কেস, বাঁশি, নোটবুক নিয়ে অন্ধ্রভবনের দিকে হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে। বেশির ভাগ দিনই খালি পায়ে।
ফুটপাথেই ক্লাস নেন তিনি, কিংবা মাঠে বসে। প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের থেকে এক টাকা গুরুদক্ষিণা হিসেবে নেন তিনি। প্রতিদিন প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আসেন তাঁর কাছে। এই ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে একটাই নামে চেনে- গিটার রাও। তবে নাম গিটার রাও হলেও বাঁশিতেও সমান দক্ষ বছর পঞ্চান্নর যশবীর রাও।
মুখে চাপ দাড়ি, পাঞ্জাবি বা সুতির জামা পরা, ছোট একটা ঝুপড়িতে থাকা একেবারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মতোই জীবনযাপন তাঁর। কিন্তু ২০০৯ সাল পর্যন্ত বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী ছিলেন তিনি। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ভাল লাগত না কর্পোরেট চাকরি। ভুগছিলেন অবসাদে।
কলেজ জীবনে শেখা গানকে ফিরিয়ে আনতে চাকরি ছাড়ার পর আস্তে আস্তে বাজারে ঋণ হতে শুরু করে। পরিবারের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অবসাদ আরও বাড়তে থাকে।
রাওয়ের এক ঘনিষ্ঠের কথায়, এক বার তিনি তিরুপতি মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েই প্রথম গিটার বা বাঁশি শেখানোর ভাবনা আসে তার মনে।
এর পর দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে আবেদন করেন, ভারতবাসীর মধ্যে যে সঙ্গীত প্রেম রয়েছে, তা আরও বাড়িয়ে তুলতে প্রতিটি স্কুলে ছোট থেকেই পাঠ্যক্রমে সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত করার কথা।
তাঁর এক ছাত্র বলেন, মাত্র কয়েক দিনেই ‘গুরুজি’র থেকে অনেক কিছু শিখেছেন তিনি।
ফুটপাথবাসী থেকে কর্পোরেট কর্মী প্রত্যেককেই শেখান তিনি। কেউ অতিরিক্ত কিছু দিতে চাইলে অন্ধ বা অনাথকে বাদ্যযন্ত্র কিনে দিতে অনুরোধ করেন। ছাত্রছাত্রীরা ভালবেসে তাঁকে অনেক সময় খাওয়ায়, কেউ জামাকাপড়ও দেয়। এ ভাবেই দিন কেটে যায় তাঁর।
জাত ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ আসেন তাঁর কাছে গিটার শিখতে। রাওয়ের দাবি, তাঁর কাছে সুর শিখতে আসেন সামরিক অফিসার ও আমলারাও। সাক্ষাৎকার নিতে এসে কেউ কেউ শিখে গিয়েছেন গিটারের প্রাথমিক পাঠ, এমনও হয়েছে।
দিল্লির অন্ধ্র ভবনে ভোর ৬টা থেকে ৯টা, বিজয় চকে দুপুর ২টা থেকে ৬টা, ইন্ডিয়া গেটে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা ক্লাস নেন তিনি।
রাওয়ের মতে, মন ভাল রাখাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ বেশির ভাগ মানুষের কাছেই টাকা থাকে। তবুও তাঁদের মন ভাল নেই। এই ভাবনা থেকেই সুরকে বেছে নেওয়া।
তেলঙ্গানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতে স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন রাও। এ বার তার ইচ্ছে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করার। গিটার, বাঁশি ছাড়াও বাজাতে পারেন বেহালা ও কি বোর্ডও।
No comments: