নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে উত্তেজনা বাড়িয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিলই ক্ষমতাসীন বিজেপির লক্ষ্য ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। সেভেন সিস্টার্সে শান্তির জন্য বিজেপিকে হটানো দরকার বলেও মত দেন তিনি। বিলটি বাতিল হলেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে বিজেপি তাদের আন্তরিকতার কথা জনগণের কাছে তুলে ধরবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, অনুপ্রবেশকারীর ধোঁয়া তুলে বিজেপি জনগণের আন্তরিকতা নয়, বরং ক্ষুণ্ণ করেছে নিজেদের সুনাম।
ভারতজুড়ে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল রাজ্যসভায় বাতিল হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবারও আসামের বিভিন্ন জেলায় আনন্দ-উৎসব হয়েছে। এতে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শুধু আসাম নয়, এমন উৎসব করতে দেখা গেছে সেভেন সিস্টার্সের অন্য রাজ্যগুলোতেও। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিলবিরোধী জোট সফল হওয়ায় মেঘালয় পিপলস পার্টির নেতারা রাজ্যজুড়ে জয়োল্লাস করেছেন। রাজধানী নয়া দিল্লি থেকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ফিরলে তাকে নাচে-গানে অভিবাদন জানানো হয়।
গেলো বুধবার রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশনের শেষদিন বিলটি পাস না হওয়া বিজেপি বিরোধীদের রাজনৈতিক বিজয় বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। দলটির সভাপতি রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকে অস্থিতিশীল করতেই অনুপ্রবেশকারী ধোঁয়া তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সভাপতি কংগ্রেস রাহুল গান্ধী বলেন, 'এক ধর্মের মানুষের সঙ্গে অন্য ধর্মের মানুষের সংঘর্ষ সৃষ্টি করাই বিজেপির কাজ। তাদের নেতারা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে আগুন লাগাতে চান। বিজেপি আগুন লাগাবে, আর আমরা সেটা ভালোবাসা দিয়ে নিভিয়ে দেবো। আমি আপনাদের রক্ষা করবো।'
বিশ্লেষকরাও বলছেন, বিলটি পাস করাতে না পারায় ঠিক যেমন কোণঠাসা হয়েছে ক্ষমতাসীনরা, তেমনি জনগণের কাছেও হারিয়েছে সুনাম।
ভারত মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুহাস চাকমা বলেন, 'নাগরিকত্ব বিলটির কারণে সারা ভারতেই বিজেপির নিন্দা হয়েছে। মিজরামে যা ভারতবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বিজেপি উত্তর-পূর্ব ভারতে যে সুনাম অর্জন করেছিল, তা একটি বিলের কারণে ক্ষুণ্ণ হয়ে গেলো। কারণ তাদের উদ্যোগটি ছিল অনর্থক। তবুও তারা এ-নিয়ে লেগে আছে। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত ভারতে যুগের পর যুগ ধরে বিভিন্ন জাতিধর্মের মানুষ বাস করছে।'
এ-অবস্থায় বিলটির বিরোধিতায় বিজেপি জোট ত্যাগ করা শরিকরা ফের জোটে ফিরে আসবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
No comments: