চুল মজবুত, লম্বা এবং ঝলমলে করতে প্রোটিন হেয়ার প্যাক অনেক বেশি কার্যকরী। অনেকেই পার্লারে প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট করিয়ে থাকেন। চুল পড়া রোধ, নতুন চুল গজানো সহ চুলের নানা সমস্যা রোধ করে থাকে প্রোটিন হেয়ার প্যাক। সময়ের অভাবে অনেকেই পার্লারে গিয়ে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন না। তারা ঘরে কিছু প্রোটিনের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
১. চুল আর্দ্র রাখতে চান? প্রোটিন আর হেলদি ফ্যাটের পরিমাণ বাড়াতে হবে খাবারের তালিকায়। আর ব্যবহার করতে হবে ময়শ্চারাইজিং হেয়ার প্যাক, যা চুল আর্দ্র ও কোমল রাখবে, সেই সঙ্গে চুলের আগা ফাটাও রোধ করবে কার্যকরভাবে। এ জন্য দরকার কোয়ার্টার কাপ ননিপূর্ণ দই আর ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল। ভালোভাবে নেড়ে মিশ্রণটি তৈরি করে নিতে হবে। তারপর মাথায় মেখে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে চুল। দই চুলকে করবে মজবুত। স্প্লিট এন্ড বা আগা ফাটা সারাবে। আর অলিভ অয়েলের ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা আটকে রাখবে। রক্ষা করবে নানান ক্ষতি থেকে।
২. এক্সট্রা কন্ডিশনিং এবং সুপার হাইড্রেটিং একটি প্রাকৃতিক উপাদান মধু। একই সঙ্গে এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানসমৃদ্ধও। মধুর সঙ্গে নারকেল, অ্যাভোকাডো কিংবা আমন্ডের তেল মিশিয়ে নিন। এক্সট্রা কন্ডিশনিং এ প্যাক তৈরিতে ২ টেবিল চামচ পছন্দসই তেলের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মৃদু গরম করে নিতে হবে। তারপর তা মাথার ত্বকে মেখে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিতে হবে আধঘণ্টার জন্য। ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। চুল হবে ফ্লেক ফ্রি, মসৃণ ও উজ্জ্বল।
৩. নারকেলের দুধ শুধু চুল জটমুক্তই রাখে না, রাখে আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ। আর প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম চুলকে কন্ডিশনড রাখার সঙ্গে সঙ্গে করে তোলে উজ্জ্বল। প্যাক তৈরির জন্য প্রথমে একটা ডিম ফেটিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে মেশাতে হবে ১ কাপ নারকেল দুধ আর এক টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। বাকিটুকু পুরো চুলে ঢেলে নিতে হবে। চুলের ডগার অংশে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মিশ্রণটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট মাখায় রেখে অপেক্ষা করতে হবে। তারপর চুল ভালো করে ধুতে হবে শ্যাম্পু দিয়ে।
৪. পাতলা চুল যারা ঘন করতে চান, এই হেয়ার প্যাক তাদের জন্য। এটি তৈরিতে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় গ্রিন টি। এতে থাকা ক্যাফেইন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ক্যাটেচিন মাথার ত্বকের এবং হেয়ার ফলিকলের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। ফলে চুল বাড়ে দ্রুত। এক টেবিল চামচ গ্রিন টির গুঁড়ার সঙ্গে সমপরিমাণ অলিভ অয়েল এবং একটা ডিম মিশিয়ে তৈরি হয় এই হেয়ার প্যাক। সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করতে হয় পরিষ্কার চুলে। প্রথমে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে ছোট ছোট ভাগে ভাগে করে নিয়ে গোড়ার অংশে মেখে নিতে হবে প্যাকটি। আস্তে আস্তে স্ক্যাল্পজুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। ত্রিশ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিলেই চলবে।
৫. তৈলাক্ত চুলের সবচেয়ে বড় সমস্যা দ্রুত তেলচিটে হয়ে যাওয়া। তাই এমন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা চাই, যা স্ক্যাল্পের পিএইচের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রেখে হেয়ার কিউটিকলকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তুলবে। সে ক্ষেত্রে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায় নির্দ্বিধায়। এটা কোয়ার্টার কাপ নিয়ে তাতে মিশিয়ে নিন এক টেবিল চামচ লেবুর রস। লেবু চুলের তেলচিটে ভাব দূর করবে, সঙ্গে স্ক্যাল্পে জমে থাকা হেয়ার প্রডাক্টের অবশিষ্টাংশ সরাবে। লিকুইড এ প্যাক ১৫ থেকে ২০ মিনিট মাথায় রাখলেই চলবে। শাওয়ার ক্যাপ পরে নেওয়া যেতে পারে এ সময়। তারপর উষ্ণ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। কন্ডিশনার ব্যবহার করা যাবে না।
৬. ধুলাবালি, সূর্যালোক কিংবা ক্লোরিন- পারিপার্শ্বিক অনেক উপাদানই চুলের কোমলতা নষ্ট করে দেয়। করে তোলে জটযুক্ত। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ফ্রিজ হেয়ার প্যাক হতে পারে চুলের পরম বন্ধু। একটা পাকা কলা চটকে নিয়ে এর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে তৈরি হয়। ব্লেন্ড করে নিতে পারলে আরও ভালো। তারপর পুরো চুলে মাখিয়ে নিতে হবে। শাওয়ার ক্যাপ পরে নিতে হবে। মিনিট বিশেক পর ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে চুল।
মনে রাখবেন, সপ্তাহে যেকোনো এক দিন একটা হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে হবে। হেয়ার প্যাক তৈরির পরপরই ব্যবহার করে ফেলা উচিত। বাসি হয়ে গেলে এর কার্যকারিতা অনেকাংশে কমে যায়।
No comments: