একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতাকে কোনও রাজনৈতিক দল ব্যবহার করেনি বলে জানিয়েছেন সংখ্যালঘু নেতারা। এ কারণে এবারের নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুরা শঙ্কাহীনভাবে ভোট দিতে পেরেছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। নির্বাচনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুরা শঙ্কাহীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সক্ষম হয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মান্ধতাকে কোনও রাজনৈতিক দল ব্যবহার করেনি। আমরা এটিকে ইতিবাচক মনে করি। এ জন্য সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ সব রাজনৈতিক দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
বেশ কয়েকটি জেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচনের আগে–পরে ফেনীর সোনাগাজী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিসহ কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্বৃত্তদের কাউকে কাউকে আটক করেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এতে সংখ্যালঘু জনমনে আশা ও আস্থা ফিরেছে।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্টভাবে তার নির্বাচনী ইশতেহারে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক নির্মূলের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতির অঙ্গীকার করেছে। এটি আক্ষরিকভাবে কার্যকর করতে ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সংসদ গঠিত হতে যাচ্ছে। আশা করা যায়, সংসদে সরকারি ও বিরোধী দল ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় সুস্পষ্ট যে অঙ্গীকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেছে, তা যথার্থভাবে পালন করবে।
রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি ছিলেন ১৮ জন। এবারও তাই আছে। দেশে ভোটারদের ১২ শতাংশ সংখ্যালঘু। তাই ৩৫ থেকে ৩৬টি আসনে সংখ্যালঘু সাংসদ থাকা উচিত ছিল। তবে ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তারা যেন সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ভূমিকা পালন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গোমেজ। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপংকর ঘোষ প্রমুখ।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
No comments: