সৌদি সরকার গত ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি প্রখ্যাত শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ শেইখ নিমর বাকের আন-নিমরকে শহীদ করে। সৌদি আরবসহ বিশ্বের বহু দেশের মুসলমানরা সৌদি সরকারের এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে। শিয়া আলেমকে হত্যার ঘটনায় বিশ্বের মুসলমানরা প্রতিবাদে ফেটে পড়লেও পাশ্চাত্যের দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক সমাজ এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেইখ নিমর বাকেরকে হত্যার ঘটনা থেকে বোঝা যায় রাজা সালমান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন বেড়েছে এবং দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। রাজা সালমান দেশের ভেতরে লোক দেখানো নানা পদক্ষেপ নিয়ে পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভাবমর্যাদা উন্নত করার চেষ্টা করছেন। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজা সালমান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে এবং গণভাবে বিরোধীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।
সৌদি কর্মকর্তারা সবসময়ই বিরোধীদের দমনের কথা বলে এসব হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ সৌদি শাসকবর্গের নানা অপরাধের ঘটনা তুলে ধরেছে। ইউরোপ-সৌদিআরব যৌথ মানবাধিকার কমিশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৮ সালে সৌদি আরবে ১৪৩জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মানবাধিকার বিষয়ে যা দাবি করছেন বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। এতে আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে নজিরবিহীনভাবে বিরোধীদের ওপর নৃশংস দমনপীড়ন চালিয়েছে সরকার। মধ্যপ্রাচ্যে মানবাধিকার বিষয়ক গবেষক অ্যাডাম কুলাক বলেছেন, ২০১৫ সালের পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা কয়েকগুণ বেড়েছে।
মরহুম শেইখ নিমর নির্ভয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলায় ২০১১ সালের আগেও তাঁকে দুই বার আটক করা হয়। সে সময় তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালে কাতিফে ইসলামি গণজাগরণ শুরু হয়। তাতে সমর্থন দেন শেইখ নিমর। এর পরের বছরই ২০১২ সালের ৮ জুলাই শেখ নিমর গ্রেপ্তার হন। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় তার পায়ে চার বার গুলি করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গুলিবিদ্ধ শেইখ নিমরকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হয়নি। গ্রেপ্তারের পর কাতিফে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তাতে কয়েক জন নিহত হন। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর সৌদি আদালত মিথ্যা অভিযোগ এনে শেইখ নিমরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। এরপর তাকে তলোয়ার দিয়ে শিরোশ্চ্ছেদ করা।
শেইখ নিমরের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ঘটনার প্রভাব শুধু সৌদি আরবের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
সৌদি সরকারের সর্বশেষ বড় অপরাধের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সৌদি সরকার বিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা। এতোসব অপরাধ ও কলঙ্কের বোঝা ঘাড়ে নিয়েও সৌদি আরব জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হতে পেরেছে যা কিনা ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক ও হাস্যকর বিষয় হয়ে থাকবে।#
No comments: