ভারতের বিজেপি শাসিত অসমের গুয়াহাটির খানাপাড়ায় আগামী ১৭ নভেম্বর প্রস্তাবিত বাঙালি গণসমাবেশ বন্ধের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতিসহ বিয়াল্লিশটি সংগঠন। আগামী পয়লা নভেম্বরের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ওই সমাবেশ বাতিল না করা হলে ১৬/১৭ নভেম্বর গোটা রাজ্য অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ২৩ অক্টোবর ওই সমাবেশের বিরুদ্ধে অসম বনধের ডাক দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে আয়োজিত বাঙালি গণসমাবেশের প্রধান বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব সাফ জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত ওই গণসমাবেশ হচ্ছেই। ২৭ টি বাঙালি সংগঠনের সদস্য সমর্থকরা ওই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। প্রস্তাবিত ওই সমাবেশ সংঘাতের নয়, একে ‘মৈত্রী সম্মেলন’ নাম দেয়া হয়েছে বলে শিলাদিত্য দেব বলেন।
এদিকে, ৪২ টি সংগঠনের পক্ষ থেকে গতকাল (শনিবার) এক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, জাতিধবংসী নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিলের পক্ষে আয়োজিত সমাবেশ কোনোভাবেই হতে দেয়া হবে না।
কৃষক নেতা অখিল গগৈয়ের দাবী, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিল পাসের মধ্য দিয়ে অসমিয়া জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে।
অন্যদিকে, অখিল গগৈয়ের বিরুদ্ধে শিলাদিত্য দেবের অভিযোগ, অখিল গগৈ মুসলিম প্রীতি দেখাতেই বাঙালি সমাবেশের বিরোধিতা করছেন। শিলাদিত্যের দাবী, অখিল গগৈয়ের মতো নেতাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল, বাংলাদেশি মুসলিমদের সুরক্ষা দেয়া। এজন্য তারা মৌলবাদীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পান বলেও শিলাদিত্য দেবের অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (আমসু) উপদেষ্টা ও অসমের সংখ্যালঘু সংগঠন সমূহের সমন্বয় সমিতির মুখ্য আহ্বায়ক আইনজীবী আজিজুর রহমান আজ (রোববার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘প্রথম কথা হল, শিলাদিত্য দেব উগ্রহিন্দুত্ববাদী লোক। উনি সবসময় চান অসমে ধর্মের নামে হিন্দু-মুসলিমরা বিভক্ত হোক। যেজন্য উনি এরকম কথা বলতে পারেন। অখিল গগৈয়ের নেতৃত্বে যেসব সংগঠন একত্রিত হয়েছে তার মধ্যে ‘আমসু’ আছে। অসম আন্দোলনের পরে অসম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ভিত্তিবর্ষ হিসেবে নাগরিকত্ব নির্ধারণে ঐক্যমত্য হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তকে অসমের সর্বস্তরের মানুষজন মেনে নিয়েছেন। এখন নতুন করে আবার একটা আইন সংশোধন করে অসমে হিন্দু বা অমুসলিমদের বসতি করার জন্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার হিন্দুত্বের নামে যে পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ওরা অসমের সর্বস্তরের রায়ের বিরোধিতা করছে।অনেক বাঙালিরাও ওই বিলের বিরোধিতা করছেন।’
আজিজুর রহমান
‘আমসু’ নেতা আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, ‘শিলাদিত্য দেব কেবলমাত্র নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে অসমে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে মেরুকরণের চেষ্টা করছেন এবং রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হল, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ কোনোভাবেই আমরা অসমের মানুষজন মেনে নিতে পারি না। বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে আসা মানুষজন তা সে হিন্দু অথবা মুসলিম হোক, আমরা তাদেরকে অসমে থাকতে দেবো না। ওই তারিখের পূর্বের যেসমস্ত মানুষ যাদের বৈধ নথিপত্র আছে তারা অসমের বাসিন্দা। তাদেরকে নিয়ে অসমের সমাজ গঠন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ১৭ নভেম্বরের বাঙালি সমাবেশের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন নয়, আসলে আমরা প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করছি।
অসমে বাঙালি সমাবেশ বন্ধের দাবিতে আল্টিমেটাম: অনড় বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য
Tag: world
No comments: