নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৬৪, নেত্রকোনা-৪ (মদন- মোহনগঞ্জ- খালিয়াজুরী) আসন। এ আসনে তিন উপজেলায় ২১টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ জন। এর মধ্যে মদন উপজেলায় ১লাখ ৯ হাজার ১৩৯, মোহনগঞ্জে ১লাখ ১৮ হাজার ৫৪৪ এবং খালিয়াজুরীতে ৬৪ হাজার ৬৫৩ জন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা শুরু করেছেন। তারা নির্বাচনী এলাকায় প্রায়শই আসা যাওয়া করছেন। নৌকার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তেমন কোনও তৎপরতা নেই। নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলা সদর থেকে শুরু করে ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে শোভা পাচ্ছে দলীয় প্রধানসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার, বিলবোর্ড এবং ব্যানার।
হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত এ আসনটি বড় দুই রাজনৈতিক দলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি থেকে কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন এ নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের জানান দিতে রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। এ আসনে মদন, মোহনগঞ্জে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান সুদৃঢ়। খালিয়াজুরীতে রয়েছে কিছুটা দলীয় দ্বন্ধ ও কোন্দল। এই তিন উপজেলায় বিএনপির অনেকটা নড়বড়ে অবস্থা। তবে বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ব্যাপারে খুবই দুর্বল। সবাই চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লুৎফুজ্জামান বাবরের অংশগ্রহণ। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এ আসনের মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে খালিয়াজুরী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সামছুজ্জামান তালুকদার সোয়েব সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং মদন ও মোহনগঞ্জে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকায় একে অপরকে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে দোষারোপ করে চলেছেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন আবদুল খালেক। তার মৃত্যুতে আসন পুনর্বিন্যাস হলে আবদুল মোমেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের ত্রাণ পুনর্বাসন ও খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে দেওয়ান শাহজাহান ইয়ার চৌধুরীর পর ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মত এমপি নির্বাচিত হন লুৎফুজ্জামান বাবর। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে এ আসনে ফের বিজয় লাভ করেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবদুল মমিন। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে প্রয়াত আবদুল মমিনের সহধর্মিণী রেবেকা মমিন বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় রেবেকা মমিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারও এমপি নির্বাচিত হন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান এমপি রেবেকা মমিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদ, জেদ্দা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ হোসেন চৌধুরী, খালিয়াজুরী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান তালুকদার সোয়েব সিদ্দিকী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (অবঃ) এম. মনজুরুল হক। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কারান্তরীণ লুৎফুজ্জামান বাবর, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-কৃষি-বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-ফারুক, জেলা বিএনপি নেতা শিল্পপতি কে এম জহির ফারুক, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা চৌধুরী।
মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুরী উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে উপজেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে দ্বিধা বিভক্তি। নির্বাচনী এলাকার মদন, খালিয়াজুরী ও মোহনগঞ্জে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত ছিল। রেবেকা মমিন সমর্থিত এক গ্রুপ ও অপর গ্রুপটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদ সমর্থিত। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মোহনগঞ্জে দুই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী নেতারা এক হয়ে যান এবং তারা রেবেকা মমিনের সমর্থক হিসেবে কাজ করছেন। এরই মধ্যে মোহনগঞ্জ ও মদনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। এমপি সমর্থিত মোহনগঞ্জে লতিফুর রহমান রতন সভাপতি ও শহীদ ইকবাল সাধারণ সম্পাদক এবং মদনে আবদুল কুদ্দুস সভাপতি ও আবুল বাশার খান এখলাছ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মোহনগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কিছুটা দ্বন্দ্বের অবসান হলেও মদন ও খালিয়াজুরীতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদ ও এমপি রেবেকা মমিন সমর্থিত শক্তিশালী দুটি গ্রুপ রয়েছে। মদনে নির্বাচিত কমিটির সভাপতি সম্পাদক রেবেকা মমিনের সমর্থক। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মদন পৌরসভার মেয়র আবদুল হান্নান তালুকদার শামীম শফি আহমেদ গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন। খালিয়াজুরীতে শফি আহমদের সমর্থক হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মইনুল হক মোহন ও উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিন তালুকদার। অন্যদিকে রেবেকা মমিন সমর্থিত খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত আবুল কালাম আজাদ শফি আহমদের সমর্থক হিসেবে কাজ করতেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। এছাড়া তিন উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমদের নীরব সমর্থক রয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে রেবেকা মমিনের সঙ্গে শফি আহমেদের রয়েছে চরম মত বিরোধ। রেবেকা মমিন এমপি বলেন, বর্তমানে তিন উপজেলায় শিক্ষা স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গত সাড়ে নয় বছরে নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক কোনও সহিংস ঘটনা ঘটেনি। আমি সাধারণ জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। পুনরায় এমপি নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ৯০ দশকের সাবেক ছাত্রনেতা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম রূপকার শফি আহমেদ ২০০৬ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়াও হয়েছিল। কিন্তু দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার কারণে ওই সময় নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। ওই সময় থেকে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করে আসছেন। এমনকি নির্বাচনী এলাকায় তার অনেক কর্মী সমর্থকও রয়েছে। শফি আহমেদ বলেন, ২০০৬ সালে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে ২০০৮ সালেও দলীয় মনোনয়ন পাই। কিন্তু একান্ত পারিবারিক কারণে রেবেকা মমিনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আমি কোনও সময় দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। মনোনয়ন না পেলেও দলের হয়ে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছি। আশা করি দলীয় হাই কমান্ড বিষয়টি বিবেচনা করবে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেবে।
জেদ্দা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, মদন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মমতাজ হোসেন চৌধুরী গত ২০০৬ সাল থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আসছেন।দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তিনি মাঠ ছাড়েননি। প্রায়শই এলাকায় আসা যাওয়া করছেন এবং দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে কর্মীসভা, গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান প্রদান করছেন। মমতাজ হোসেন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আশা করি দলীয় হাইকমান্ড বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেবে। মনোনয়ন না পেলেও দলের হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করব।
খালিয়াজুরী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান তালুকদার সোয়েব সিদ্দিকীও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। সামছুজ্জামান তালুকদার সোয়েব সিদ্দিকী বলেন, বিগত ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। রেবেকা মমিন এমপির আশির্বাদপুষ্ট কয়েকজন হাইব্রিড নেতার এলাকায় লাগামহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জলমহালে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় বিগত উপজেলা নির্বাচনে মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলা আমাদের হাতছাড়া হয়েছে। আমি দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের অকুণ্ঠ সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছি। আমার পিতা মরহুম সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন একজন কর্মী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। খালিয়াজুরীতে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের পরীক্ষিত কোনও নেতার দলের মধ্যে ঠাঁই নেই। বিগত কয়েক বছর এলাকায় জলমহাল ব্যবসার সুবাদে বিএনপির নেতারা পুনর্বাসিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের স্বার্থে সকলেই দলীয় প্রার্থীর পরিবর্তন চাই।
আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সেনা কর্র্মকর্তা ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনজুরুল হক ২০০৪, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছিলেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। এম মনজুরুল হক বলেন, দলের হয়ে কাজ করছি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
হাওর অঞ্চল হিসেবে খ্যাত এ আসনের তিন উপজেলা বিএনপিতে বড় ধরনের কোনও কোন্দল বা মরতো বিরোধ নেই। মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন অনেকেই। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার প্রশ্নে নেতাকর্মী ও সমর্থদের নিয়ে এক হয়ে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কারান্তরীণ লুৎফুজ্জামান বাবর বড় ধরনের ফ্যাক্টর। তিন উপজেলায় বিএনপি তার জন্য একাট্টা এবং সাধারণ মানুষের মাঝে রয়েছে তার ব্যাপক জনমত। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে এলাকার বেকার যুবকদের সরকারি বেসরকারি দপ্তরে চাকরি দেয়া এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করায় তিনি সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মামলা সংক্রান্ত কারণে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর অংশগ্রহণে ব্যর্থ হলে বাবর পত্নী তাহমিনাজ্জামান শ্রাবণী বিকল্প প্রার্থী হতে পাড়েন বলে দলীয় নেতাকর্মী ও আত্মীয় স্বজনরা বলছেন। নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলাতেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা বাবর মুক্তি পরিষদের ব্যানারে লুৎফুজ্জামান বাবরের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছেন। লুৎফুজ্জামান বাবরের আত্মীয় জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আলহাজ আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। জাতীয়তাবাদী দলের সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য। বিগত ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার গুরুত্বপূর্ণ চার আসনটিতে চারদলীয় ঐক্যজোট প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-প্রকাশনা সম্পাদক জেলা বিএনপির সম্মানিত সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বিশাল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়ে সফলভাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ওই সময়ে সারা জেলায় বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে অসহায় বেকার যুবক-নারীদের বিনা পয়সায় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতে সহযোগিতা করে সর্বমহলেই প্রশসিংত হয়েছেন। দীর্ঘদিন জেলে আটক থাকলেও নির্বাচনী এলাকাসহ সারা দেশেই বাবরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দল অংশগ্রহণ করলে জেলা বিএনপির প্রথম সম্মানিত সদস্য কারান্তরীণ লুৎফুজ্জামান বাবরও অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আর যদি কোনও কারণে তিনি অংশগ্রহণে ব্যর্থ হন তাহলে বাবরের সহধর্মীনী তাহমিনাজ্জামান শ্রাবণী বিকল্প প্রার্থী হতে পারেন।
নেত্রকোনা বিসিকের সভাপতি, কেন্দ্রীয় নাসিবের সহ- সভাপতি ও জেলা বিএনপি নেতা শিল্পপতি কে এম জহির ফারুক বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। তিনি যুব সমাজের বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছেন। কে এম জহির ফারুক বলেন, দলের হয়ে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে নিজ নির্বাচনী এলাকার বেকার যুবকদের দেশ-বিদেশে যোগ্যতা অনুসারে চাকরির ব্যবস্থা করেছি। আশা করি দলীয় হাই কমান্ড বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেবে। মনোনয়ন না পেলেও দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি এবারই দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা বলেন, নির্বাচনী এলাকাসহ জেলার দলীয় নেতাকর্মীদেরকে অনেক সময় বিনা টাকায় আইনি সহায়তা দিয়ে থাকি। অবহেলিত এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল ফারুক দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার পক্ষে জেলা সদরসহ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন কর্মী সমর্থকরা। জেলা বিএনপি নেতা জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা চৌধুরীও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে কাজ করছেন। তিনি প্রায়শই নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন এবং দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং গণসংযোগ করছেন। মাসুদ রানা চৌধুরী বলেন, দলের হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মামলা মোকদ্দমায় আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি যোগ্যতার ভিত্তিতে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী খান মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
আওয়ামী লীগ চায় আসনটি ধরে রাখতে, বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার
Tag: others
No comments: