নীলফামারীর প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল ছাত্রী ৩ চাচাতো বোন মুন, মিম ও মেধা। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্কুল, জেলা ও বিভাগের গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে নৈপুণ্য দেখিয়ে সাফল্য পেয়েছে। পরিবারের উৎসাহ আর স্কুলের সহযোগিতায় ২০১৩ সাল থেকে বিতর্ক চর্চায় তাদের পথচলা।
২০১৭ সালে বিটিভির স্কুল পর্যায়ের জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দলগত রানার্সআপ ও মুন শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয়।
নীলফামারীর পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের কৃষিজীবী শাহ পরিবার। পরিবারের প্রধান করিম শাহ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুতে পারেননি। আর্থিক অসঙ্গতির পরেও সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার যথাযথ আলো ছড়াতে পারেননি। এ অবস্থায় একান্নবর্তী পরিবারকে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নিতেই উপস্থিত বক্তৃতা ও বিতর্ক চর্চায় যাত্রা শুরু তিন চাচাতো বোন লুবনা আক্তার মুন, ফারজানা আক্তার মিম ও মারুফাতুল জান্নাত মেধার।
করিম শাহ বলেন, 'আমি তাদের বলি, আমি পারলাম না। আমার ছেলেরা পারলো না। তোমরা যথেষ্ট চেষ্টা করবা।'
ওরা সবাই পঞ্চপুকুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী বলেই পরিচিত। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় পরিবারের সহযোগিতায় ও স্কুলের শিক্ষকদের উৎসাহে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ শুরু মুনের। এরপর তার দু'বোন যোগ দেয় তার সাথে। স্কুলে বিতর্ক চর্চার জন্য গঠন করা হয় বিতর্ক ক্লাব। প্রথমে আন্তঃস্কুল, তারপর জেলা, বিভাগ পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য পায় তারা।
মুন বলছিলো, 'প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আমার কথা বলার ধরণ দেখে বলেছিলেন যে, তুমি উপস্থিত বকৃতা করতে পারো। তখন থেকেই আমার বিতর্ক জগতে আসা।'
মিম বলছিলো, 'আমরা যেখানেই যাই সবাই বলে, বাহ! তোমরা তিন বোন একসঙ্গে বিতর্ক করো।'
সবশেষ গতবছর বিটিভির স্কুল পর্যায়ের জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিন বোনের দল রানার্সআপ ও লুবনা আক্তার মুন শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয়। এর মাধ্যমেই দেশব্যাপী তাদের পাশাপাশি পরিচিতি পায় পঞ্চপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বাবুল হোসেন বলেন, 'অন্যান্য বাচ্চারাও তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এই ডিবেট ক্লাবের সফলতা নীলফামারী জেলার মধ্যে একটা সুনাম বয়ে নিয়ে এসেছে।
২০১২ সালে স্কুলে গড়ে তোলা ডিবেট ক্লাবের সদস্য সংখ্যা এখন ত্রিশ জন। চারজন শিক্ষক এর তত্বাবধায়ক।
প্রত্যন্ত গ্রামের তিন বোনের সাফল্যের গল্প
Tag: others
No comments: