লালমনিরহাট-রংপুর বিভাগের মানুষের স্বপ্নের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধনের আগেই সংযোগ সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এলজিইডি বিভাগের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর সহায়তায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দায়সারাভাবে কাজ করার কারণে সংযোগ সড়কের বিশাল অংশ ধসে যেতে বসেছে। নদী পারের মানুষের অভিযোগ সেতু এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার প্রতিবাদ করেও কোনও প্রতিকার পাননি। বরং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা অনিয়মকে নিয়ম হিসেবে জায়েজ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের কাজকে বৈধতা দেয়ার জন্য সড়ক নির্মাণে তিন দফায় মোট ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও উদ্বোধনের আগেই ধসে যেতে শুরু করেছে সংযোগ সড়কটি। যদিও লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস,এম জাকিউর রহমান দাবি করেছেন সম্প্রতি বন্যায় তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুর কিছু অংশ ধসে গেছে। তবে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে তিস্তা নদীর ওপর ৮৫০ মিটার দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণকাজ ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠের জনসভা থেকে উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লালমনিরহাটের চারটি উপজেলাসহ বৃহত্তর রংপুরের প্রায় ৫০ লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল কাকিনা-মহিপুর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু। ২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন। এরইমধ্যে সেতুর কাজ বুঝে নিয়েছেন সরকারি বাস্তবায়নকারী বিভাগ এলজিইডি।
জানা গেছে, ১২৩ কোটি ৮৬লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মিত। একই অর্থে সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ১৩০০ মিটার নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর সঙ্গে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা থেকে সেতু পর্যন্ত ৫.২৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে দুইটি প্যাকেজে চার কোটি ৪৬ লাখ এবং এ সড়কে দুইটি ব্রিজ ও তিনটি কালভার্ট নির্মাণে তিনটি প্যাকেজে নয় কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় হয়।সেতু থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ সেতু বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর। আর এ কাজের অগ্রগতি মনিটরিং করা হয় লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে। ২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মাণ কাজ শেষ করার আশ্বাস দেয়া হলে আবারও দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন।
স্থানীয় লোকজন জানান, পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে দুই ফিট এটেল মাটি দেয়ার কথা থাকলেও শুধু বালুর উপর খোয়া দিয়ে দায়সারা কাজ করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ধসে যাচ্ছে সড়ক। ব্যবহৃত খোয়ার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সুফল পাননি স্থানীয়রা। ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণেও বিস্তর অনিয়ম থাকলেও টাকার জোরে স্থানীয় প্রকৌশলীরা সবকিছু বৈধ করে নিয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্রিজটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই জনগণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। দিনক্ষণ ঠিক হলেই প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন এর ম্যানেজার প্রবীর কুমার বিশ্বাস নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা সেতুর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। সেতুটির দুধারে ৬২ মিটার করে মোট ১২৪ মিটার সংযোগ সড়কের কাজ করেছি। বাকি কাজ অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করেছে।
এদিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে লালমনিরহাট এলজিইডির দপ্তর । বিভিন্ন সড়ক, ব্রিজ ও সংস্কার কাজে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে কতিপয় প্রকৌশলী। কোথায় সামান্য কাজ দেখিয়ে পুরো টাকা লুট, কোথাও ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজস করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার আবার কোথাও বা পছন্দের ঠিকাদারদের সুযোগ করিয়ে দিয়ে মোটা অংকের পার্সেন্টেস গ্রহণ। বিশেষ করে ২০১৭- ১৮ অর্থ বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলসহ লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় এলজিইডির তত্ত্বাবধানে রাস্তা, ঘাট, ব্রিজ কালভার্টসহ সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও যেন দেখার কেউ নেই।
উদ্বোধনের আগেই দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর সংযোগ সড়কে ভাঙন
Tag: Featured
No comments: