ভারতীয় কংগ্রেসকে হারানোর জন্য টাকা নিয়েছিল অ্যানালিটিকা!
ভারতীয় কংগ্রেসকে হারানোর জন্য টাকা নিয়েছিল অ্যানালিটিকা!
কেমব্রিজ আন্যালিটিকার কীর্তি কাহিনী যতই প্রকাশ্যে আসছে, ততই আরও বেশে বেশি তাজ্জব হওয়ার মতো অবস্থা। ভারতের নির্বাচনে ইতিমধ্যেই কলকাঠি নেড়ে ফেলেছে এই সংস্থাটি, এমনই দাবি অ্যানালিটিকার পেরেন্ট কোম্পানি স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের ভারতীয় শাখার প্রাক্তন অধিকর্তা অবনীশ রাইয়ের। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে অবনীশ বলেছেন, একটি বিধানসভা ভোটে ‘‘কংগ্রেসকে হারানো চেষ্টা করেছিল আন্যালিটিকা। এ জন্য তারা গুজরাতের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল।’’
অবনীশের দাবি নিয়ে তোলপাড় পড়ে গেছে ভারতীয় রাজনীতিতে। গুজরাতের ওই ব্যবসায়ীর নাম কী? কোন রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিতে ওই ব্যবসায়ী কংগ্রেসকে হারানোর জন্য টাকা ঢেলেছিলেন? অবনীশের বিস্ফোরক দাবিতে কিন্তু হরেক প্রশ্ন উস্কে উঠেছে।
ব্রিটিশ সংস্থাটি কী ভাবে ভারতীয় রাজনীতির গতিমুখ ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল, কেন চেয়েছিল, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অবনীশ। তাঁর বক্তব্য, ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ভারতে শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল লন্ডনের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন লিমিটেড। কে তাদের প্রথম ক্লায়েন্ট? বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতা মহেশ শর্মা— বলছেন অবনীশ। তাঁর দাবি, ‘‘মহেশ আমাদের কাছে এসেছিলেন ২০০৯ সালের (লোকসভা) নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ জানতে। সেই প্রজেক্টে জেডি(ইউ) নেতা কেসি ত্যাগীর ছেলে অম্বরীশের সংস্থা ওভলেনো বিজনেস ইনটেলিজেন্স এবং স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন এক সঙ্গে কাজ করেছিল।’’ ফেসবুক কাণ্ডে যাঁকে সম্প্রতি বরখাস্ত করা হয়েছে, অ্যানালিটিকার সেই আলেক্সান্ডার নিক্স নাকি সেই সময় ব্যবসা বাড়ানোর জন্য কংগ্রেসের কাছাকাছি আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কী ছিল সেই পরিকল্পনা? অবনিশের দাবি,‘‘২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে সেই রাজ্যের ৫টি লোকসভা কেন্দ্রের ডেটাবেস রহুল গাঁধীকে উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন নিক্স। তাঁর মনে হয়েছিল, কংগ্রেসের অনেক টাকা। রাহুলকে সন্তুষ্ট করা গেলে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের কাজ পেতে অসুবিধা হবে না।’’
এই পর্যন্ত এক ভাবে চলছিল। লন্ডনের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের তৈরি করা প্রশ্নের উপর দাঁড়িযে শুরু হয় সমীক্ষা। কিন্তু অবনীশের দাবি, ‘‘প্রশ্নের ধরন দেখে তাঁদের মনে হয়েছিল কংগ্রেসের ভাবমূর্তিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্যেই সমীক্ষা করা হচ্ছে। যেমন, ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার বদলে সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে।’’
কিন্তু কেন? আচমকাই কেন সব বদলে গেল? যার জন্য কাজ করা তাদের সঙ্গেই কেন বিশ্বাসঘাতকতা? স্ট্র্যাটেজিকের ভারতীয় শাখার অনেকেরই মনে হয়েছিল, তাঁরা তো ডাবল এজেন্টের কাজ করছেন! ব্রিটেন থেকে আসা স্ট্র্যাটেজিকের পদস্থ এক মহিলা কর্মীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘‘লন্ডনের কর্তারা এমনটাই চাইছেন।’’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ট্যাটেজিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিযেছিল বলে দাবি করছেন অবনীশ। তাঁর বক্তব্য, গুজরাতের ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা তিনি জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু তাঁর কিছুই করার ছিল না।
No comments: