নেপালের ত্রিভুবনে অবতরণ নিয়ে ভয় পেয়েছিলেন বিমানমন্ত্রীও!
বিমানের ফ্লাইট পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাজাহান কামাল।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তিন দিনব্যপি আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন মন্ত্রী। এ সময় নেপাল এয়ারপোর্টের রানওয়ের বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী। জানান, ১৩ তারিখ ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামতে গিয়ে তাকে বহনকারী বিমানটিরও সমস্যায় পড়ার কথাও।
বিমানমন্ত্রী সেদিনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমি নেপালের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আর্মি চিফকে বলেছি, আপনাদের এয়ারপোর্ট ঠিক করুন। ওখানে দৈনিক ৩০ টার মতো প্লেন ওঠানামা করে। এটা পাহাড়ের দেশ। আমি যেদিন গেলাম, ১৩ তারিখে আমার প্লেনটাও এক ঘন্টা আকাশে আটকে রেখেছিলো। আমি তখন অন্য কর্মকর্তাদের বলেছি, তোমরা একটু জিজ্ঞেস কর, প্লেন নামতে পারবে কি পারবে না?’
সেসময় তিনি নিজেও শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান বিমানমন্ত্রী।
বলেন, ‘ওই এক ঘন্টা আমার কাছে ১০ ঘন্টার মতো লেগেছে। আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিলো। পানি খেয়েছি কয়েকবার।’
ত্রিভুবন বিমানবন্দরের ত্রুটির কথা তুলে ধরে উপস্থিত এয়ারলাইন্স মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এই বিমানবন্দরটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটার রানওয়ে ১০ হাজার ফিট। এটা আরও অনেক বড় করতে হবে। ওরা পারছে না কেন? পাহাড়ের জন্য? সে যাই হোক, আপনারা খুব কেয়ারফুল থাকবেন। আমি কিন্তু আমাদের পাইলটকে দোষ দেইনি। আমি ওদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আপনাদের যারা পাইলটকে ডিরেকশন দিয়েছে, তারাই ঠিকমত ডিরেকশন দিতে পারেনি। আমাদের পাইলট ছিলেন অত্যন্ত এক্সপার্ট। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভালো পাইলট।’
নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখার করার কথাও নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেন এ কে এম শাজাহান কামাল।
‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আমাকে একেকজন একেক কথা বলে। কেউ বলে পাইলটের দোষ। কেউ বলে এটিসি টাওয়ারের দোষ। প্রধানমন্ত্রী বললেন, দেখেন এটা আমিই বলতে পারবো না। আমি ব্ল্যাকবক্সটা রিকভারি করেছি। আপনাদের লোকও আসছে। আমাদের লোক সহ ইনকয়্যারি টিম করে দিয়েছি। এরপর তাদের যা সিদ্ধান্ত, তাই হবে।’
বিমানমন্ত্রী জানান, মর্গে নিহতদের শনাক্ত করতে প্রথমে তাকেই ঢুকতে দেয়া হয়।
তিনি জানান, ‘মর্গে একমাত্র আমাকে ঢুকতে দিয়েছিলো। সেখানে ৮ জনকে আমি নিজে শনাক্ত করি।’
এছাড়াও নেপালের হাসপাতালগুলোতে আহতদের সঙ্গেও দেখা করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘তিনটা হাসপাতালে আমাদের রোগী ছিলো। কেবল বাংলাদেশের নয়, নেপালের যারা আহত ছিলৈন, তাদের সঙ্গেও আমি দেখা করেছি। এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, এটা এই জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। এই ক্ষতি আমরা কীভাবে সহ্য করবো- এই ভাষা আমার জানা নাই।’
নিজের বক্তব্যে উপস্থিত এয়ারলাইন্স মালিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বিমান মন্ত্রী, যাতে এধরণের দুর্ঘটনা আর কখনও না ঘটে।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এয়ারলাইন্সের যারা মালিক, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, সতর্কতার সঙ্গে বকিছু দেখাশোনা করতে হবে। বিমানের যারা পাইলট ও ক্রু, তাদের প্রতি আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এখানে ব্যবসাটা বড় কথা নয়। ব্যবসার চেয়ে মানুষের জীবন বড়। আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলো তো অনেক বেশি সতর্ক থাকে।’
১২ মার্চ নেপালের কাঠমাণ্ডুতে ঘটে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা। ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট সেদিন দুপুরে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে নিহত হন ২৬ বাংলাদেশি।
No comments: