ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক ঘায়েল করার জন্য নয় বলেও জানান আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা সাংবাদিকদের কাজকে বাধাগ্রস্ত করবে না। সাংবাদিকদের কাজ গুপ্তচরবৃত্তি নয়। তাঁরা তথ্য সংগ্রহ করেন বা করবেন প্রতিবেদন তৈরির স্বার্থে। সরকারের গোপন তথ্য সরকারের শত্রু বা বিদেশের কাছে সরবরাহ করার জন্য নয়।
বিচার বিভাগের নানা অনিয়ম নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সত্যতা আছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান মন্ত্রী।
গত রোববার সুপ্রিমকোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে সংবর্ধনা প্রদানকালে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বিচার বিভাগের অবক্ষয় ঘটেছে। তবে আদালতের ভাবমূর্তি উন্নত করতে নতুন প্রধান বিচারপতির পদক্ষেপে নিঃশর্তভাবে সমর্থন করবেন বলে জানান তিনি।
মাহবুবে আলম আরও বলেন, ইতিপূর্বে একজন প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেয়ার সময় আদালতের অবক্ষয়ের কিছু নমুনা তুলে ধরেছিলাম। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তদন্তের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তদন্ত অনেকটা অগ্রসরও হয়েছিল, কিন্তু যখন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি এলেন, ওনার দফতর থেকে সেই ফাইলটা নিখোঁজ হয়ে গেল।
অ্যাটর্নি জেনারেলের ওই বক্তব্যের সূত্র ধরেই আজ মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগে নানা অনিয়ম নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম কথায় সত্যতা আছে।
এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক ঘায়েল করার জন্য নয় বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ল রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, কোনো সাংবাদিক তাঁর বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য যদি ৩২ ধারায় অভিযুক্ত হন, তাহলে তিনি (আইনমন্ত্রী) নিজে বিনা পারিশ্রমিকে তাঁর (সাংবাদিক) পক্ষে মামলা লড়বেন।
গত ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়। এর মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করলেও নতুন আইনে ৫৭ ধারার বিষয়বস্তুগুলো চারটি ধারায় ভাগ করে রাখা হয়েছে। এ জন্য আলাদা আলাদা শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। আইসিটি আইনে ৫৭ ধারায় মানহানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোসংক্রান্ত বিষয়গুলো একত্রে ছিল।
নতুন আইনের ৩২ ধারা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি উঠেছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার অতিগোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে সেই কাজ হবে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে।
No comments: