প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বাসায় আছেন
অসুস্থ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বাসায় আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিমকোর্ট বার) সভাপতি সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন অসুস্থ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অবস্থা জানতে চেয়ে আজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চে লিখিত আবেদন করেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা অসুস্থ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বাসায় আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘আমরা আইনে আবদ্ধ। আপনারা যে আবেদন করেছেন, সেটি সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে পড়ে কি-না?’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, আমি নিশ্চিত উনি (বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) তার বাসভবনে আছেন। তিনি কার সঙ্গে দেখা করবেন বা করবেন না, এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। এটি কি আমাদের কাজ? আমরা কি নির্দেশনা দিতে পারি?
অসুস্থতার কথা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একমাসের ছুটির পর সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব পেয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাষ্ট্রপতিকে ছুটির বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানানোর পর গত সোমবার রাতেই রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনে প্রজ্ঞাপন জারি করে। আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটি মঞ্জুরের বিষয়ে অনুমোদন করেছেন। তার অসুস্থতাজনিত ছুটি ভোগের সময় আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্ব পালনের মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এস কে সিনহা
লক্ষ্মীপূজায় অংশ নিতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান এক মাসের ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি মন্দিরে যান। এ সময় তাঁর স্ত্রী সঙ্গে ছিলেন।
মন্দিরে ২০ মিনিটের মতো অবস্থান করেন প্রধান বিচারপতি। লক্ষ্মীপূজায় অংশ নিয়ে তিনি ও তাঁর স্ত্রী মন্দির থেকে বের হয়ে যান। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব কুমার দে প্রথম আলোকে এ কথা জানান।
বিপ্লব কুমার দে বলেন, প্রধান বিচারপতির আসার বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত ছিল না। তিনি এসেছিলেন লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে। এ সময় মন্দিরে পূজা উদ্যাপন কমিটির তেমন কোনো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন না। যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির তেমন কোনো কথাও হয়নি।
অসুস্থতার কারণে ২ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে আছেন প্রধান বিচারপতি। আজ তাঁর সঙ্গে আইনমন্ত্রী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন।
সরকার বলছে, কারও অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ দাবি করেছেন, প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আইনমন্ত্রী
এক মাসের ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইনমন্ত্রী। পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। উনি বিশ্রাম নিচ্ছেন।’
বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির ভিসার আবেদন বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। আমিও উনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি।
একটি সূত্র জানায়, বিকেল চারটার দিকে আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাসভবনে যান। সেখানে তিনি আধা ঘণ্টার মতো অবস্থান করেন।
এর আগে দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। প্রায় এক ঘণ্টা তিনি সেখানে অবস্থান করেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। ওনার দায়িত্ব পালনে আমার সম্পূর্ণ সহযোগিতার কথা বলেছি। এর আগেও দুজন প্রধান বিচারপতি দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তখন তাঁদের বলেছিলাম যে আইন মন্ত্রণালয় হচ্ছে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের সেতুবন্ধ। সে কথা আজ আবারও বলেছি এবং সহযোগিতার কোনো কমতি হবে না, এটাও বলেছি।’
সাক্ষাতের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য বিচারপতিরা ছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘একসময় আপিল বিভাগের অপর চার বিচারপতিও এসেছিলেন। ওনাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’ দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি এ পর্যন্ত ২৭ বার দায়িত্ব পেয়েছেন। তাহলে আজ কেন সাক্ষাতের জন্য এলেন, এ প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার জানামতে উনি কিন্তু বিচারিক কার্যভার অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে আগে করেননি।’
ছুটিতে যাওয়া প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আজ ওনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেননি। তাঁর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তিনি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে জানান। তিনি অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার ভিসার জন্য আবেদন করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে কথা বলে তো উনি করেননি।’