ইসরাইলের দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থেকে কেন সরে আসলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আরেকটি নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটে ঘোষণা করেছেন, তিনি ইসরাইলস্থ মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস বা জেরুজালেমে সরাতে চান না। তিনি সম্প্রতি একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলেন, “তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস সরানোর আগে শান্তি প্রক্রিয়াকে আরেকটি সুযোগ দিতে চাই। ”
অথচ গত বছর নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় ট্রাম্প জনগণকে এই দূতাবাস স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মার্কিন কংগ্রেস ১৯৯০-এর দশকের শেষার্ধে এমন একটি বিল পাস করেছিল যার ফলে দেশটির সরকার আমেরিকার দূতাবাস তেল আবিব থেকে বাইতুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তর করার দায়িত্ব পায়। কিন্ত তা সত্ত্বেও গত প্রায় ২০ বছর যাবত কোনো ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এই উস্কানিমূলক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সাহস দেখাননি।
অধিকৃত ফিলিস্তিনের বাইতুল মোকাদ্দাস শহরে মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা মসজিদুল আকসা অবস্থিত বলে বিশ্বের দেড়শ’ কোটি মুসলমানের কাছে এই শহরের মর্যাদা অত্যধিক। কাজেই এই শহরকে দখলদার ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে গেলে মুসলিম বিশ্ব তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এ ছাড়া, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবে পূর্ব বাইতুল মোকাদ্দাসকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ইহুদিবাদীরা এই শহরকে ইসরাইলের রাজধানীতে পরিণত করতে চায়।
পূর্ব বাইতুল মোকাদ্দাসে রয়েছে মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা মসজিুদল আকসা
এরকম রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বাস্তবতার আলোকে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস শহরে নিয়ে আসার অর্থ হবে এই শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। এ কারণে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই আমেরিকার মিত্র বহু পশ্চিমা ও মুসলিম দেশ ওয়াশিংটনকে এই পরামর্শ দেয় যে, মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করলে স্পর্শকাতর পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। কিন্তু প্রথম প্রথম সে পরামর্শে কান দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। তাই প্রথম বিদেশ সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরব হয়ে ইসরাইলে যান।
সে সময় আশঙ্কা করা হয়েছিল ট্রাম্প হয়তো মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে বাইতুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তরের কাজ ওই সফরেই সেরে ফেলবেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরপরই সে ধরনের ঝুঁকিতে যেতে চাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এরপর গত জুনে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ ছয়মাসের জন্য স্থগিত করে মার্কিন সরকার। এরপর চলতি সপ্তাহে দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত দৃশ্যত পুরোপুরি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ব্যাপারে তার পূর্বসূরিদের পথই অনুসরণ করলেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।#