রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের নতুন আলামত পেল এইচআরডব্লিউ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর যৌন নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের নতুন আলামত হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং স্যাটেলাইটে ধারণকৃত চিত্র বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলছে, রাখাইনের মং ডুতে গত ২৭ আগস্ট সংঘটিত হত্যা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা মিয়ানমারের সামগ্রিক মানবতাবিরোধী অপরাধের চিত্র স্পষ্ট করে তুলেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানায়, ২৭ আগস্ট সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে নিরাপত্তার জন্য একটি আবাসিক কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া গ্রামবাসীদেরকে পিটিয়ে, যৌন নিপীড়ন চালিয়ে, ছুরিকাঘাত এবং গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনারা। সেনাবাহিনী ঠিক কতজন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তবে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, মং ডু এবং পার্শ্ববর্তী হপং তো পিন গ্রামগুলো প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আগে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া চার লাখ রোহিঙ্গাসহ মোট শরণার্থীর সংখ্যা ৯ লাখের বেশী।
রোহিঙ্গাদের জন্য ৫৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন
এদিকে, রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আগামী ছয় মাস সাহায়তার জন্য ৫৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায়তায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো বুধবার জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রিত পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এক লাখের জরুরিভিত্তিতে আশ্রয় প্রয়োজন। শরণার্থীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশিই শিশু, এছাড়া নারীর সংখ্যাও কম নয়। ২৪ হাজার গর্ভবতী রোহিঙ্গার জন্য জরুরি মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা দরকার।
শ্মরনার্থীদের জন্য যদি শিগগিরই পর্যাপ্ত পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়বে। মহামারী দেখা দেয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাগুলো।
কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে বাংলাদেশকেই
এ প্রসঙ্গে, জাতীয় তফসির পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আহমেদ আবদুল কাইউম রেডিও তেহরানকে বলেন, মিয়ানমারের এ জাতি নিধন কর্মকাণ্ডের প্রতি চীন সমর্থন জানাচ্ছে, ভারত অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে এবং জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন বাংলাদেশকেই কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের গ্রামে আগুন
রোহিঙ্গা গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলেন ২০ দেশের রাষ্ট্রদূতরা
ওদিকে, মিয়ানমারে কর্মরত অধিকাংশ পশ্চিমা দেশসহ ২০ দেশের রাষ্ট্রদূত এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পরিদর্শনকালে সেনাবাহিনীর সহিংসতায় ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্য দেখেছেন। সেখানে বাড়ি-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং এসব বসতবাড়ির বাসিন্দারা অন্য কোথাও পালিয়ে গেছে।
মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতায় মঙ্গলবার রাখাইন সফর শেষে কূটনীতিকরা বলেন, ‘আমরা ওই সফরে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখেছি এবং আমরা আরেকবার আহ্বান জানাচ্ছি সেখানে যেন মানুষ নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে। পাশাপাশি ওই রাজ্যে জীবনরক্ষাকারী সেবা পৌছাতে হবে এবং অন্য রাজ্যের সাথে কোন বৈষম্য রাখা যাবে না।’
কূটনীতিকরা ‘ইউএন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন’কে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের অনুমতি প্রদানের জন্য আহ্বান জানান।#