সর্দি-কাশির মত ডিপ্রেশনও একটা রোগ’
আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ‘মানসিক অবসাদ’ বিশ্বের একনম্বর রোগ হতে চলেছে। আর মহিলারাই বেশি এই রোগের শিকার। তাই সাবধান হয়ে যান এখনই। মন ভাল করার টিপস দিচ্ছেন ডা: হিরণময় সাহা। শুনলেন মানসি সাহা।
অবসাদ বা ডিপ্রেশনে যাঁরা ভুগছেন, অনেক সময় তাঁরা টেরই পান না অসুখ কতটা গভীর। বিশ্ব জুড়ে দুই-তৃতীয়াংশ মনোরোগীর ক্ষেত্রেই হতাশার মতো অসুখকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। পরিজনেরা বিষয়টি উড়িয়ে দেন। এর পরিণাম মারাত্মক হতে পারে। প্রিয়জন বিয়োগ, খারাপ নম্বর, সম্পর্কে গুরুত্ব না পাওয়া, দাম্পত্য সম্পর্কে অবনতি, অপরাধ বোধ, দীর্ঘ অসুস্থতা, নানা কারণ থেকে ডিপ্রেশন হয়।
১. ডিপ্রেশনটা কী?
দেখ, সর্দি-কাশির মতো ডিপ্রেশনও একটা রোগ। তবে এটা বাইরে থেকে দেখে সহজে বোঝা যায় না। আসলে আমাদের মস্তিকে কিছু বায়োকেমিক্যাল চেঞ্জ হয়। যার প্রভাব আমাদের মনের উপর পরে। গার সেটাই মানসিক অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২.মন খারাপ মানেই কী ডিপ্রেশন?
না মন খারাপ মানেই যে ডিপ্রেশন, সেটা ঠিক নয়। মেঘলা দিনেও তো আমাদের মন খারাপ হয়। আবার রোদ ওঠার সাঙ্গে তা ঠিকও হয়ে যায়। তাই মন খারাপ মানেই ডিপ্রেশন নয়। তবে মন খারাপটা যদি টানা দু’সপ্তাহ ধরে থাকে। তাহলে সেটা ডিপ্রেশন।
৩.ডিপ্রেশন কখন বুঝব কী করে?
মন খারাপটা যদি অনেকদিন ধরে চলতে থাকে, সঙ্গে কাজের ইচ্ছে, ঘুম বা খিদের ইচ্ছে চলে যাওয়া বা কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে না করা ডিপ্রেশনের লক্ষ্মণ হতে পারে। এছাড়া অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। কারও কারও এর সঙ্গে মাথা-গা-হাত পা ব্যাথা হতে পারে। এছাড়া সব সময় নিজেকে ছোত করে দেখা বা আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। শেষে নেগেটিভ চিন্তা গ্রাস করতে করতে অনেকের মৃত্যু চিন্তা আসে।
৪.কী কী কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে?
ডিপ্রেশনের সঠিক কোনও কারণ হয় না। যে কোনও কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে। যেমন ধর প্রিয়জনের মৃত্যু। পোষ্যের মৃত্যু। পারিবারিক কলহ। আসল কথা মাস্তিকের বায়োকেমিক্যাল চেঞ্জ হলেই ডিপ্রেশনের স্বীকার হতে হবে। তবে ঠিক কি কারণে, কখন এটা হবে তা বলা যায় না।
৫.ডিপ্রেশন থেকে সেটা ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে গড়াছে, সেটা বোঝা যাবে কী করে?
এটা ডিপ্রেশনের লাস্ট ধাপ বলতে পারও। একটা সময় জীবনের সব আশা শেষ হয়ে যায়। কোনও কাজেই মন বসে না। জীবন নিরার্থক মনে হয়। ঠিক তখনই মানুষ বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে যত আত্মহত্যা হয়েছে বেশির ভাগই ডিপ্রেশনের কারণে।
৬.কোন বয়সের পর বেশিরভাগ মেয়েরা ডিপ্রেশনে ভোগে? কেন?
আগে মনে করা হয় বয়স্করাই ডিপ্রেশনের শিকার হন বেশি। কিন্তু এখন সমীক্ষা বলছে যেকোনও বয়সে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে ডিপ্রেশনের শিকার হতে পারে। যদিও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এই রোগের প্রবণতা বেশি।
তবে মেয়েদের ৪০ বছরের পর একটা ডিপ্রেশন আসে। সেটার কারন মেনোপজ। এই সময় মেয়েদের শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়। এছাড়া মনের উপরও একটা প্রভাব পড়ে।
৭.ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়?
ডিপ্রেশন হলে সবার প্রথমে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। দরকার হলে কাউন্সেলিং করান। আর মনকে আনন্দে রাখা। তারজন্য গান শোনা, প্রিয়জনের সঙ্গে গল্প করা, নিজের হবি তৈরি করা, টিভি দেখা, যোগা-প্রাণায়াম-শরীরচর্চা করা কিংবা সকালে হাঁটতে যাওয়া। মনকে সব সময় উৎফুল্ল রাখতে হবে।
৮.ডিপ্রেশন থাকলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায় না। চলতি এই ধারনাটা ভুল/ঠিক?
এটা একদম ভুল কথা। সমস্ত রোগের মতো ডিপ্রেশনও সেরে যায়। তবে কিছুদিন সময় নেয়। আর সেই সময়টায় দরকার পরিবারের সহযোগিতা।
৯.মানসিক অসুস্থতা কী চারিত্রিক দুর্বলতার প্রতীক?
না মানসিক অসুস্থতা চারিত্রিক দুর্বলতার থেকে আসে না। আমাদের চরিত্রে অনেক খামতিই থাকে তবে সেটা থেকে কখন ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে না।
১০.ভালবাসা আর যত্ন এই দু’টি পেলে কী ডিপ্রেশন সেরে যায়?
ভালবাসা ও যত্ন যেকোন রোগীর মহাঔষধ। কিন্তু ভাল খাবার-যত্নে যেমন টিবি, ক্যানসার সেরে ওঠে না, ঠিক তেমনি ওষুধ ছাড়া ভালবাসা ও যত্নএ ডিপ্রেশন সারে না।