নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকায় অস্ত্র বহনে অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে
আমেরিকায় আবারো নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও অস্ত্র আইন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে আমেরিকায় এ নিয়ে বিতর্ক চললেও এ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি।
আমেরিকায় প্রায়ই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সর্বশেষ নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহরে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। রোববার রাতে আমেরিকার সমসাময়িক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ওই গুলিবর্ষণে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আমেরিকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই হত্যাকাণ্ডকে শ্রেফ শয়তানী কর্মকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্য রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাও নিহতদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তবে এ ধরণের ঘটনা রোধে কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজকর্মীদের মধ্যে তীব্র মতভেদ বিরাজ করছে।
বর্তমানে কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউজের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে অবাধ অস্ত্র বহনের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী রক্ষণশীলদের হাতে এবং লাস ভেগাসে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারা মায়াকান্না করছে। কিন্তু দেশটির লিবারেল গ্রুপ এবং কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ডেমোক্র্যাটরা অস্ত্র বহনের অবাধ স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা মনে করেন, মার্কিন সমাজে এখন হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার রাজত্ব চলছে। সামাজিক অবক্ষয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অপরাধী কিংবা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত যে কোনো ব্যক্তি সহজে অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারছে এবং চাইলেই জনসমাবেশ স্থলে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে।
আমেরিকায় অস্ত্র বহনের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের সমর্থকরা বাজারে অস্ত্র কেনা-বেচা সংক্রান্ত আইন আরো কঠোর করার এবং এর ওপর সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা ন্যান্সি পোলুসি সহিংসতা বিস্তারের কারণ তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলেও হোয়াইট হাউজ তা নাকোচ করে দিয়েছে।
বর্তমান মার্কিন প্রশাসন বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনোভাবেই চান না অস্ত্র বিক্রি ও তা বহনের অবাধ স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হোক। বরং তিনি ও তার উপদেষ্টারা মনে করেন মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা এবং কম জনবসতি এলাকার মানুষের নিরাপত্তা বা আত্মরক্ষার জন্য সবারই অস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে।
আসলে, অস্ত্র বিক্রিবাবদ অর্জিত বিপুল অংকের অর্থের মালিকরা অস্ত্র স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এমনকি নিরীহ মানুষের জীবনের বিনিময়ে হলেও তারা এ স্বাধীনতা বজায় রাখতে চায়।
যাইহোক, অতীতে বহু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও মার্কিন বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ অস্ত্র বহনে অবাধ স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে রাজি হননি। এমনকি সর্বশেষ লাস ভেগাসের হত্যাকাণ্ডের পরও তাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এ কারণ আগামীতে আরো বড় ধরণের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। #