Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » ব্যালন ডি’‌ওর বেচে চ্যারিটিতে দান





ব্যালন ডি’‌ওর বেচে চ্যারিটিতে দান


ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো: তখন সাত-সাত বছরের হলেও, ঘটনাগুলো গেঁথে আছে মনে। চোখ খুলে, বন্ধ করেও দিনগুলো দেখতে পাই। সেই সময় আমি রাস্তায় ফুটবল খেলতাম। হুশ করে গাড়ি ছুটত!‌ মুহূর্তের জন্য থামতাম। আবার খেলতাম। কিন্তু বাবা সব সময় বলতেন, সিএফ অ্যান্ডোরিনহা (‌‌বাবা যে দলের কিট ম্যান ছিলেন)‌‌–র যুব দলের হয়ে খেলার জন্য। জানতাম, উনি মনে মনে চান আমি খেলি। ওঁর কাছে এটা ছিল গর্বের ব্যাপার। জানেন, প্রথম যখন যুব দলে নাম লেখালাম, নিয়মকানুন কিছু বুঝিনি। কিন্তু ভাল লেগেছিল গোটা ব্যাপারটা। বাবা প্রতিদিন সাইডলাইনে বসে থাকতেন। আমাকে তাতাতেন। কিন্তু আমার মা আর বোনের ফুটবল নিয়ে কোনও আগ্রহই ছিল না তখন!‌ তাই প্রত্যেক রাতে নৈশভোজের সময় বাবা বোঝানোর দায়িত্বটা নিতেন। রোজই বলতেন, ‘‌জানো ক্রিশ্চিয়ানো গোল করেছে।’‌ কিন্তু মা আর বোন খুব একটা আগ্রহী হত বলে মনে হয় না। একদিন বাবা বাড়ি ফিরে বললেন, ‘‌ক্রিশ্চিয়ানো জোড়া গোল করেছে।’‌ কিন্তু তা–‌ও একই হাল!‌ তারপর তিন গোল করলাম। ছবিটা বদলায়নি। রোজ সাইডলাইনে বাবাই দাঁড়িয়ে থাকতেন একা!‌ কিন্তু একদিন কী হল জানেন?‌ দেখলাম মা আর বোন পাশাপাশি বসে আছে!‌ ওরা দু’‌জনে এর আগে কখনও ফুটবল ম্যাচ দেখেনি। জানতাম। কিন্তু ওরা এসেছিল, এটাই ছিল আমার কাছে এক অন্য অনুভূতি!‌ মনে হল বুকের ভেতর আগুন জ্বলে উঠেছে। আমাদের আর্থিক অবস্থা তখন মোটেই ভাল নয়। মাদেইরাতে জীবন হোঁচট খেয়ে খেয়েই এগোচ্ছিল। নতুন বুট কেনার টাকা ছিল না। কিন্তু ছোটবেলায় বোধহয় টাকাকড়ির মূল্যটা মাথায় আসে না। অনুভূতির গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি থাকে। মা আর বোনের ওই উপস্থিতি সেই ভাল লাগার অনুভূতিটাই উসকে দিয়েছিল।

স্পোর্টিং লিসবন
১১–র যখন তখন স্পোর্টিং লিসবনের আকাদেমিতে যোগ দিই। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল সেটা। আমার ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রের বয়স এখন সাত। চার বছর বাদে ওকে আকাদেমিতে পাঠিয়ে দেব, ভাবতেই পারি না। এখন বুঝি আমার মা–বাবার মনের অবস্থা তখন ঠিক কেমন ছিল। কিন্তু স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করতে হলে, আমাকে যেতেই হত। তাই গিয়েছিলাম। জানেন, সেই সময় প্রতিদিন আমি একা একা বসে কাঁদতাম। পর্তুগালের মধ্যেই ছিলাম। অথচ মনে হত ভিন মুলুকে গিয়েছি বুঝি!‌ কাউকে চিনতাম না। কারও কথা বুঝতাম না। একাকিত্বে ভুগতাম। চার মাস বা তার থেকেও বেশি দিন বাদে পরিবারের কেউ এসে আমার সঙ্গে দেখা করত। ফলে সবাইকে মিস করতাম। ওই কঠিন সময় ফুটবল আমাকে শুধু তাড়িয়ে নিয়ে গেছে। শুনতাম সমবয়সিরা বলাবলি করছে, ‘‌দেখেছ নতুন ছেলেটাকে?‌ ও তো দৈত্য!‌’‌ ক’‌দিন বাদে কোচেরাও আলোচনা শুরু করল আমাকে নিয়ে। কিন্তু সেই সময় আরও একটা কথা কানে আসত, ‘‌ছেলেটা খুব রোগা!‌ ছোটখাট একদম!‌’‌ ব্যস, ওই এগারো বছর বয়সেই ঠিক করে ফেললাম, পরিশ্রম করে যেভাবেই হোক নিজেকে তৈরি করব। সেই থেকে ছোটদের মতো খেলা, আচরণ করা বন্ধ করে দিলাম। সেরা হতেই হবে, জেদ চেপে গেল। রাতে ডর্মিটরি থেকে লুকিয়ে বেরিয়েও ট্রেনিং করতাম। জানেন যখন পনেরোর হলাম, তখন একদিন সতীর্থদের পরিষ্কার বলেছিলাম, ‘‌আমি সেরা হবই।’‌ সতীর্থরা হেসেছিল। কিন্তু মনের মধ্যে বিশ্বাস ছিল। পারবই।
মায়ের চিন্তা
সতেরোর যখন মা আমার খেলা দেখতেই পারত না। বড় ম্যাচ দেখতে এসে একবার তো এত নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন যে‌ ডাক্তার দেখাতে হয়!‌ কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখা ছাড়িনি। আমার স্বপ্নের ক্যানভাসটা দিন দিন বড় হয়েছে। আমি জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। ম্যান ইউয়ের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। টিভিতে যেহেতু প্রিমিয়ার লিগ দেখতাম, তাই ওই দলটাই আমাকে টানত।
ম্যান ইউ
কী করে এত দ্রুত বল নাড়াচাড়া হয়!‌ কীভাবে গান গাওয়া হয় গ্যালারি থেকে!‌ স্বপ্ন মনে হত ম্যান ইউয়ের পরিবেশ। তাই ক্লাবে সই করার মুহূর্তটা আমার কাছে ছিল অত্যন্ত গর্বের।
আবেগ
প্রথম ট্রফি জয়ের অনুভূতি, প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় ম্যান ইউয়ের জার্সিতে অসাধারণ ছিল। একই অনুভব ছুঁয়ে গিয়েছিল প্রথমবার ব্যালন ডি’‌ওর জেতার মুহূর্তেও। এই অনুভূতি, আবেগের কোনও ব্যাখ্যা হয় না।
রিয়েল মাদ্রিদ
মাদ্রিদে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম মাদ্রিদে ট্রফি জিততে। ক্লাবের কিংবদন্তি হতে। গত আট বছর অসাধারণ সব ঘটনা ঘটেছে মাদ্রিদে। রিয়েলে সব কিছু জিততে না পারলে, লোকে আপনাকে ব্যর্থ বলবে। প্রত্যাশা পূরণ করাটা আমার কাজ। রিয়েলে থাকাকালীন আমি শুধু ফুটবলার হয়ে নিজেকে মেলে ধরিনি। বাবাও হয়েছি। আর বাবা হওয়ার অনুভূতিটা যে কীরকম, সে শুধু অভিভাবকরাই জানে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের রাতে ছেলের সঙ্গ
কার্ডিফে ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজতেই মনে হয়েছিলাম, বিশ্বকে বার্তা দিতে পেরেছি। কিন্তু তার পরই দেখলাম আমার ছোট্ট ছেলে ছুটে এল। মুহূর্তে আমার আবেগ বদলে গেল।  তারপর ছেলের হাত ধরে গোটা মাঠে হেঁটেছিলাম। এই অনুভূতির সঙ্গে শুধু তুলনা চলে মাদেইরাতে প্রথম দিন যখন মা আর বোনকে দেখেছিলাম মাঠে, সেদিনের অনুভূতির।
মিশন
আমার মিশন?‌ এখনও একই আছে। মাদ্রিদে একের পর এক রেকর্ড গড়ে যেতে চাই। যত বেশি সম্ভব ট্রফি জিততে চাই। আমার খিদেটা বদলায়নি। আমি এরকম ছিলাম। আছি। থাকব। যখন ৯৫–এর হব, তখন আমার নাতিপুতিদের গল্প করতে চাই, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ছেলের হাত ধরে মাঠে হাঁটার অনুভূতি কেমন ছিল। এই অনুভূতির স্বাদ আবারও পেতে চাই। বারে বারে পেতে চাই।

মাঠে তিনি যতই ক্ষিপ্র হন, যতই আগ্রাসী মনোভাব দেখান, আবেগ তাঁকেও ছুঁয়ে যায়। বোঝা গেল প্রতিটি শব্দে। আর তাঁর কোমল হৃদয়ের পরিচয় দিলেন আরও একভাবে। ২০১৩–র ব্যালন ডি’‌ওর পুরস্কার নিলাম করে চ্যারিটিতে অর্থ দিয়ে। ইজরায়েলের ধনী ব্যবসায়ী যা কিনেছেন ৬ লাখ ইউরো (‌‌ভারতীয় মুদ্রায় ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকায়)‌‌!‌ মেক–আ–উইশ ফাউন্ডেশন শিশুদের দুরারোগ্য চিকিৎসায় সাহায্য করে থাকে, তাদের কাছেই যাবে এই নিলামের অর্থ।‌‌‌






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post