সাংবাদিকদের তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগে আগ্রহী করতে হবে সেমিনারে বক্তারা
সাংবাদিকদের তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগে আগ্রহী করতে হবে
'তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করে সঠিক তথ্য জানতে সাংবাদিকদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। দেশের সব আইন সরকারের পক্ষে। এই একটি মাত্র আইন সরকারের বিপক্ষে প্রয়োগ করা যেতে পারে।'
বুধবার আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার আইন দিবস উপলক্ষে ডেইলি স্টারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
তারা বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জানতে হবে তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ। এ আইনের বলে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা, আইনের বেড়াজালে যে তথ্য আড়ালে রাখা হয়েছে। তথ্য আড়াল করার সুযোগে অনিয়ম-দুর্নীতির যে সুযোগ সৃষ্টি হয়, তার প্রতিকার করতে হবে তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগে।
আলোচনা সভার আয়োজন করে ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) নামে একটি সংগঠন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।
বক্তব্য রাখেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সাবেক অডিট কম্পট্রোলার জেনারেল আহমেদ আতাউল হাকিম, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞ অমূল্য কুমার দেবনাথ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং ভারত থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক এশিয়া টাইমসের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সম্পাদক সৈকত দত্ত। তারা দু'জনেই তথ্য অধিকার আইনের খুঁটিনাটি তুলে ধরে সাংবাদিকদের বেশ কিছু পরামর্শ দেন।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙা টিভির প্রধান সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা, ডিবিসির প্রধান সম্পাদক জাহিদুল আহসান পিন্টু, এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন, প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদক টিপু সুলতান, এমআরডিআইর প্রধান নির্বাহী হাসিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান, যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক গ্রামের কাগজের সম্পাদক মুমিনুল ইসলাম মুমিন, ডেইলি স্টারের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রিয়াজ আহমেদ, নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী এবং ঢাকার বাইরের একাধিক সাংবাদিক আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, আইন প্রয়োগ করে তথ্য পাওয়া এখনও কঠিন। সরকারি দপ্তরগুলোতে কাগজে-কলমে ২৫ হাজার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু জনসাধারণ জানে না, কারা কারা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য কমিশন তথ্য পাওয়ার অধিকারকে সহজতর করার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ৩৩৬টি আপিল আবেদন জমা পড়ে কমিশনে। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩৯টি।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এই আইন বড় শক্তি। তিনি বলেন, ভালো প্রতিবেদন, বিশেষ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরি সহজসাধ্য নয়। তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
মাহফুজ আনাম বলেন, তথ্য অধিকার সাংবাদিকদের জন্য আইনি হাতিয়ার হতে পারে। প্রতিটি সংবাদপত্র অফিসে তথ্য অধিকার ডেস্ক থাকা উচিত।
সৈকত দত্ত তার প্রবন্ধে জানান কীভাবে তিনি তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার করে বহুল আলোচিত 'চাল কেলেঙ্কারি' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আইনের প্রয়োগ করে কীভাবে সাংবাদিকরা সরকারি দপ্তরের তথ্য পেতে পারে।
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য সরকারি দপ্তরগুলোর সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে আবেদন করতে হবে। একটি আবেদনপত্রে একাধিক তথ্য না চেয়ে, পৃথক পৃথক আবেদনপত্রে তথ্য চাইতে হবে। যাতে একটি আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলেও অন্য আবেদনের তথ্যগুলো পাওয়া যায়