জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭২তম অধিবেশনে ভাষণ দেন।
তাঁর ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সকল বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষা এবং রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আশু ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি অবিলম্বে সেখানে ‘তথ্য অনুসন্ধ্যান মিশন’ পাঠানোর আহ্বান জানান এবং জাতিগত নিধন বন্ধে আরো কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন।
মিয়ানমারকে অবশ্যই নি:শর্তভাবে অবিলম্বে ও চিরতরে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও জাতিগত নিধনের চর্চা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বল প্রয়োগের ফলে বাংলাদেশে আসা বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের সকল রোহিঙ্গার তাদের নিজ দেশে ‘স্থায়ীভাবে ফেরত’ নেয়ার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই লোকদের অবশ্যই মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদে তাদের দেশে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এটা তাঁর ১৪তম ভাষণ, তবে এবার তিনি নিউইয়র্কে এসেছেন ‘ক্ষুধার্ত, নির্যাতিত ও গৃহহীন রোহিঙ্গাদের’ দেখার পর ভারাক্রান্ত হ্রদয়ে। এই রোহিঙ্গারা নৃশংসতা এড়াতে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার বান্দরবানে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে চলমান নৃশংসতা ও মানবাধিকার লংঘনের প্রেক্ষিতে আমরা এই মুহূর্তে নিজ ভূখ- থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় নিয়েছে। যার ফলে পুনরায় বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
শেখ হাসিনা মিয়ানমারে চলমান সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সরকার জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলে।
তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা বন্ধে ওই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ও জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই আমরা শান্তি কেন্দ্রীক অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে চলছি।
শেখ হাসিনা মধ্য প্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সকল প্রকার যুদ্ধবিগ্রহ ও বৈষম্যের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থায়নে জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘একটি বলিষ্ট ও উদ্ভাবনী প্রস্তাবের’ অপেক্ষায় রয়েছে।
শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ ও তাদের অর্থের যোগান বন্ধ করা এবং শান্তিপূর্ণভাবে সকল আন্তর্জাতিক অমীমাংসিত বিরোধ নিষ্পতি করার জন্য তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। কারণ শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথে সহিংস সন্ত্রাসবাদ বড় ধরনের হুমকি।
প্রধানমন্ত্রী ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধের হুমকি প্রতিরোধে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাঙ্গালীদের ওপর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বর্বরোচিত নৃশংসতা এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে আর্ন্তজাতিক গণহত্যা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদে ধর্মের অপব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, সমাজে পরিবার, নারীসমাজ, যুব, মিডিয়া এবং ধর্মীয় নেতাদেরকে সন্ত্রাসবাদ বন্ধে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈন্য ও পুলিশের অংশ গ্রহণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতার গুরুত্বারোপ করে।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা তহবিলে ১ লাখ মাকির্ন ডলার এবং যৌন হয়রানির শিকারদের জন্য গঠিত ভিকটিম সাফোর্ট ফান্ডে ১ লাখ মাকির্ন ডলার প্রদানের ঘোষণা দেন।
তিনি নিরাপদ অভিবাসন, শরনার্থী সংকট, আবহাওয়া পরিবর্তন, এসডিজি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মতো বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের অধিনে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশ বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোর্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য অজর্ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি সংক্রান্ত উচ্চ পযার্য়ের প্যানেলের একজন সদস্য হিসাবে তিনি সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।