ঢেঁড়শের অসাধারন স্বাস্থ্য উপকারিতা
ঢ়েঁড়শ পুষ্টিসমৃদ্ধ গ্রীষ্মকালীন সবজি। তাছাড়া ঢেঁড়শ বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ও স্বাদে ভরপুরে ভরা সবজি। এই স্বাদযুক্ত ঢেঁড়শে রয়েছে প্রচুর পরিমাসে ভিটামিন বি ও সি। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োডিন, ভিটামিন “এ“ ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে। ঢেঁড়শ নিয়মিত খেলে গলাফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে না এবং এটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। ঢেঁড়শে প্রচুরপরিমাণে ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস ও আয়রন রয়েছে। এতে রিবোফ্লাবিনের পরিমাণ বেগুন, মুলা ও টমেটোর চেয়ে বেশি আছে। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পেটের প্রস্রাব ও পায়খানা পরিষ্কার করতে ঢেঁড়শের অনেক গুন । খুসখুসে কাশিতেও উপকার করে এই সবজিটি। হজমশক্তি বাড়ায়, বাতের প্রকোপ কমায়। ডায়বেটিসের জন্য অনেক উপকারী। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দূর করে এই ঢেঁড়শ। এককথায় বলা যায় সবজিটির স্বাস্থ্য উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
ঢেঁড়শের ঔষধি পুষ্টিগুণ
ঢেঁড়শ (Okra) Malvaceae গোত্রের সবজি (Abelmoschus eseulentus)। ঢেঁড়শের মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। এ সবজি ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও লোহাসমৃদ্ধ। ঢেঁড়শে প্রতি ১০০ গ্রামে ভক্ষণযোগ্য অংশে আমিষ (১.৮ গ্রাম), ভিটামিন-সি (১৮ মিলিগ্রাম), খনিজ পদার্থ বিশেষ করে ক্যালসিয়াম (৯০ মিলিগ্রাম), লোহা (১ মিলিগ্রাম) ও আয়োডিন রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ঢ্যাঁড়সে পাবেন শক্তি ৩৩ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেটস ৭.০৩ গ্রাম, প্রোটিন ২ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ৩.২ গ্রাম, ফোলেট ৮৮ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন ১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২১.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৩৭৫ আইইউ, ভিটামিন ই ০.৩৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ৫৩ মাইক্রোগ্রাম, সোডিয়াম ৮ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৫৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৬৩ মিলিগ্রাম, জিংক ০.৬০ মিলিগ্রাম, ক্যারটিন-বি ২২৫ মাইক্রোগ্রাম, লুটেইন ৫১৬ মাইক্রোগ্রাম। এতোসব উপকারী উপাদান সমৃদ্ধ সুলভ এই সবজি নিয়মিত শোভা পেতে পারে আপনার খাবারের এক কোণে।
ঢেঁড়শের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১। খারাপ কোলেস্টেরল কমায়
ঢেঁড়শের মধ্যে রয়েছে সলিউবল ফাইবার (আঁশ) পেকটিন। যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলকে কমাতে বিশেষভাবে উপকারি। এতে করে কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা ও হৃদপিণ্ডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
২। উচ্চমাত্রার আঁশ
ঢেঁড়শে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ আঁশ। এটা হজমে সাহায্য করে। পেকটিন অন্ত্রের ফোলাভাব কমায় এবং অন্ত্র থেকে বর্জ্য সহজে পরিষ্কার করে থাকে। ঢেঁড়শের আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে সহায়ক। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যতালিকায় ঢেঁড়শ রাখা উচিত।
৩। কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
ঢেঁড়শ কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ঢেঁড়শের উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। এতে করে দেহে ক্যান্সারের কোষ জন্মাতে পারে না। সুতরাং নিয়মিত ঢেঁড়শ খাওয়ার অভ্যাস ক্যান্সার থেকে রক্ষা করবে আপনার পরিবারকে।
৪। রক্তস্বল্পতা দূর করে
ঢেঁড়শ দেহে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। এতে করে অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তস্বল্পতা দূর হয়। তাই অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে নিয়মিত ঢেঁড়শ খাওয়া উচিত।
৫। শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে
ঢেঁড়শের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। অ্যাজমার লক্ষণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে এবং অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ঢেঁড়শ বেশ উপকারী। তাই যাদের অ্যাজমার সমস্যা কিছুটা দেখা দেয় তাদের নিয়মিত ঢেঁড়শের সবজি খাওয়া প্রয়োজন।
৬। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের গঠনে
ঢেঁড়শ গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে। এমনকি মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধও করে। গর্ভধারণের নানা সমস্যা ও গর্ভকালীন সময়ে ফিটাসের নিউরাল টিউবের জটিলতা দূর করতে ঢেঁড়শ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৭। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
ঢেঁড়শ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে অনেক সহায়ক। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া আরো প্রয়োজনীয় মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ। যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে করে ছোটোখাটো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ দূরে থাকে।
৮। ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
ঢেঁড়শ ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের টিস্যু পুনর্গঠনে ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
৯। চুলের যত্নে
ঢেঁড়শ চুলের কন্ডিশনার হিসেবে বেশ ভালো। এটি খুশকি দূর করে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য খুব উপকারী।
১০। বিষণ্ণতা দূর করে
ঢেঁড়শ বিষণ্ণতা, দুর্বলতা এবং অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।
১১। দৃষ্টি ভালো রাখে
ঢেঁড়শে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন। যা চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
১২। হাড়ের ক্ষয়রোধে
ঢেঁড়শের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলায়েট যা হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে।
১৩। দাস্ত অপরিষ্কার
দাস্ত অপরিষ্কার, খাওয়ার সাথে সাথে সারাশরীরে কামড়ানি, এমন অবস্থায় বীজ বাদ দিয়ে ২০-২৫গ্রাম ঢেঁড়শ ৩ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সে পানি মাঝে মাঝে খেতে হবে। তাতে অসুবিধাটা চলে যাবে, সে সাথে প্রস্রাবও পরিষ্কার হবে।
১৪। প্রস্রাবের উগ্র গন্ধ
কাঁচা ঢেঁড়শ বীজ বাদ দিয়ে ২৫-৩০ গ্রাম নিতে হবে। তারপর ১ লিটার পানিতে সিদ্ধ করে আন্দাজ ২৫০-৩০০ মিলিলিটার থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা করে পানিটা সারা দিনে দুই-তিনবারে পান করতে হবে। এভাবে কয়েক দিন খেলে দেখা যাবে প্রস্রাবের উগ্র গন্ধটা কমে গেছে।
১৫। প্রস্রাবের স্বল্পতা
যারা পানি পরিমাণে কম পান করে না, অথচ পান করার পরিমাণ মতো প্রস্রাব হয় না, তারা বীজ বাদ দিয়ে কাঁচা ঢেঁড়শ ৪-৫ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে দেড়-দুই কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে চটচটে সে পিচ্ছিল পানি পান করলে প্রস্রাব সহজভাবে হবে ও পরিমাণে বেড়ে যাবে।
১৬। খুসখুসে কাশি
বীজ বাদ দিয়ে কাঁচা ঢেঁড়শ কুচিকুচি করে কেটে কড়া রোদে শুকিয়ে সেগুলো গুঁড়ো করে ৫-৭গ্রাম পরিমাণে নিয়ে চিনির কড়া রসে মেড়ে মোমবাতির মতো পাকিয়ে রাখতে হবে। গলা খুসখুস করলেই একটু চুষে খেলে কাশি চলে যাবে। যেকোনো বয়সের লোক এটি খেতে পারে এবং সাথে সাথে উপকার পাওয়া যায়।
১৭। ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার (রক্তশর্করা)
রক্তে শর্করা বাড়লে বা বাড়তে থাকলে কালো জামের বিচির গুঁড়ো ১ গ্রাম নিয়ে ৩-৪টি কাঁচা ঢেঁড়শের সিদ্ধ পানির সাথে প্রতিদিন খেলেই এটি আর থাকবে না।
১৮। অপুষ্টি দূর করতে
রোজ সকালে কয়েকটি নরম ঢেঁড়শ খেলে অপুষ্টি দূর হয়।
১৯। আমাশয়
গাছের মূল পিষে চিনি মিশিয়ে খেলে আমাশয় সেরে যায়।
২০। মূত্রদোষ
ধাতুক্ষরণে মূত্রনালী টিপলে একটি তরল পিচ্ছিল পাতলা আঠা বের হয়। এ ত্রুটি প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণও হতে পারে। এ রকম ক্ষরণ হলে ২৫-৩০গ্রাম কাঁচা ঢেঁড়শ (৩-৪ টা মতো)বেটে ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে পাতলা কাপড়ে ছেঁকে কয়েক দিন খেতে হয়। এর ফলে দুই-তিন দিনের মাঝে অসুবিধাটা চলে যাবে। তবে হজম শক্তি ভালো না থাকলে কাঁচা বেটে না খেয়ে পানিতে সিদ্ধ করে ছেঁকে খাওয়া ভালো।
২১। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ঢেঁড়শ
ঢ়েঁড়শ পুষ্টিসমৃদ্ধ গ্রীষ্মকালীন সবজি। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ঢেঁড়শে প্রচুরপরিমাণ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন আছে। এতে রিবোফ্লাবিনের পরিমাণ বেগুন,মুলা ও টমেটোর চেয়ে বেশি আছে। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ঢেঁড়শ খেলে দূর হবে ১০ গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক সমস্যা। চলুন জেনে নেই ঢেঁড়শের কিছু গুনাগুন।
ঢ্যাঁড়স দেহে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। এতে করে অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তস্বল্পতা দূর করে। অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে নিয়মিত ঢ্যাঁড়স খাওয়া উচিৎ।
ঢ্যাঁড়সের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের মিউটেশন প্রতিরোধ করে এবং ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে। এতে করে দেহে ক্যানসারের কোষ জন্মাতে পারে না। নিয়মিত ঢ্যাঁড়স খাওয়ার অভ্যাস ক্যানসার থেকে রক্ষা করে।
ঢ্যাঁড়সের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলায়েট যা হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ঢ্যাঁড়সের ভিটামিন সি ও এ এ্যাজমার প্রকোপ কমায় এবং অ্যাজমা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ঢ্যাঁড়সে রয়েছে স্যলুবল ফাইবার যা দেহের খারাপ কোলেস্টরল কমাতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এতে করে কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা ও হৃদপিণ্ডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ঢ্যাঁড়সের ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যতালিকায় রাখুন ঢ্যাঁড়স।
ঢ্যাঁড়সে ইনসুলিনের মতো উপাদান রয়েছে যা রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে করে ডায়বেটিসের সমস্যা দূরে থাকে।
ঢ্যাঁড়সের ভিটামিন এ এবং সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এতে করে নানা ধরণের ছোটোখাটো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ দূর করা সম্ভব হয়।
গর্ভধারণের নানা সমস্যা ও গর্ভকালীন সময়ে ফেটুসের নিউরাল টিউব ডিফেক্ট দূর করতে ঢ্যাঁড়স কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ঢ্যাঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, লুটেইন ও বেটা ক্যারোটিন যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
অনেকেই ঢেঁড়শ নামক সবজিটি খেতে পছন্দ করে না। বিশেষ করে বাচ্চারা জোর করে না খাওয়ালে ঢেঁড়স খেতেই চায় না। বড়রাও অনেকে ঢেঁড়শ একেবারেই পছন্দ করেন না। কিন্তু ঢেঁড়শ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। নিয়মিত ঢেঁড়শ খাওয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকগুলো শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম।