অং সান সুচির জানা-অজানা তথ্য
সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। সেনাদের হাতে নির্যাতিত হয়ে হাত-পা হারিয়ে ও নারীরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। এসব বিষয় নিয়ে বর্তমান সময়ে নোবেল বিজয়ী সুচিকে নিয়ে সারা বিশ্বের কৌতুহলের শেষ নেই। চলুন পাঠক আমরা জেনে নেই মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী অং সান সুচির জানা-অজানা নানান তথ্য-
জন্মগ্রহণ:
শিক্ষা জীবন:
নয়াদিল্লিতে কনভেন্ট অফ জেসাস অ্যান্ড মেরি স্কুলে সুচি পড়াশোনা করেন, পরে ১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লেডী শ্রী রাম কলেজ থেকে রাজনীতি বিষয়ে ডিগ্রি পাশ করেন। ১৯৬৭-তে অক্সফোর্ডের সেন্ট হাগস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে বি.এ. ডিগ্রি নেন এবং ডিগ্রি এম.এ. অর্জন করেন রাজনীতি বিষয়ে। স্নাতক পাশের পর তিনি নিউ ইয়র্কে তাদের পারিবারিক বন্ধু ও একসময়ের জনপ্রিয় বর্মী পপ-গায়িকা মা থান ইয়ের সাথে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে সুচি বর্মী সাহিত্য বিষয়ে এমফিল ডিগ্রি নেয়ার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (সোয়াস) গবেষণা শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি সোয়াস-এর একজন অনারারি ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন। দুবছরের জন্য তিনি ভারতের শিমলায় অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজের ফেলোও ছিলেন।
বিবাহিত জীবন:
১৯৭২ সালের ১লা জুনে সুচি এবং অ্যারিস, ভুটানে বসবাসরত তিব্বতি সংস্কৃতি বিষয়ের পণ্ডিত গবেষক, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী বছর লন্ডনে তাদের প্রথম সন্তান আলেকজান্ডার অ্যারিসের জন্ম হয়। দ্বিতীয় সন্তান কিম জন্ম নেয় ১৯৭৭ সালে।
স্বামীর সঙ্গে শেষ দেখা:
১৯৮৮ সালে সুচি তার অসুস্থ মায়ের দেখাশোনার জন্য বার্মা ফিরে আসে, তবে এরপরে গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার উদ্দেশ্যে। ১৯৯৫-এর ক্রিসমাসে অ্যারিস বার্মায় গেলে তাদের শেষবারের মতো দেখা হয়, কারণ সুচি বার্মাতেই থেকে যান কিন্তু বর্মী স্বৈরশাসকেরা অ্যারিসকে আর কখনো বার্মায় প্রবেশের ভিসা দেয়নি। ১৯৯৭ সালে অ্যারিসের প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং তা ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। অ্যারিসকে নিয়ে চিন্তিত হবার দায় সরকারের নয়, অং সান সুচিরই উচিত তাকে দেখতে বিদেশে যাওয়া। সেসময় সুচি গৃহবন্দীত্ব থেকে সাময়িক ছাড়া পেলেও দেশত্যাগ করতে রাজি হননি, কারণ তার আশঙ্কা ছিল একবার দেশ ছেড়ে গেলে সামরিক জান্তা তাকে আর ফিরতে দেবে না। তারা এই ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস দিলেও তিনি সেগুলো বিশ্বাস করেননি। ১৯৯৯ সালের ২৭শে মার্চ অ্যারিস মৃত্যুবরণ করেন।
শারিরীক সমস্যা:
গৃহবন্দী থাকাকালে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার গাইনী অবস্থার কারণে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এশিয়া রয়্যাল হসপিটালে। ২০১৩-এর ডিসেম্বরে তার পায়ে ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয় এবং চোখের অস্ত্রোপচার হয় ২০১৬-র এপ্রিলে। সুচির ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেছেন যে, তার সিরিয়াস কোনো শারীরিক সমস্যা নেই তবে ওজন মাত্র ৪৮ কেজি, রক্তচাপ নিম্ন এবং সহজেই তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন।
গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্তি:
২০০৮ সালের ২রা মে মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস আঘাত হানালে ঝড়ো হাওয়ায় সুচির হ্রদ-তীরবর্তী ভাঙাচোরা বাড়ির ছাদ উড়ে যায় এবং বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় প্রায় অন্ধকারের মধ্যে তাকে থাকতে হয়। রাতের বেলায় তিনি মোমবাতি ব্যবহার করতেন কারণ তাকে কোনো জেনারেটর দেয়া হয়নি। ২০০৯-এর আগস্টে বাড়িটা মেরামত ও সংস্কার করার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। অবশেষে ১৩ই নভেম্বর ২০১০ তারিখে সু চি গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্তি পান।
নোবেল পুরস্কার:
১৯৯১ সালে মিয়ানমারের অং সান সুচি নোবেল পুরস্কার পান। তবে পুরস্কার পাওয়ার সময় তিনি দেশটিতে গৃহবন্দি হিসেবে ছিলেন। সুচি'র ছিল দীর্ঘদিন আন্দোলনের ইতিহাস। তবে তার আন্দোলন সহিংস ছিল না, যা নোবেল কমিটি উল্লেখ করেছে।
যে তিন কারণে নোবেল পেয়েছেন:
নোবেল কমিটি তাদের বিবৃতিতে সুচিকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করেন। এগুলো তাদের বিবৃতিতেই উঠে এসেছে। ১৯৯১ সালে অং সান সুচিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে নোবেল কমিটির প্রেস রিলিজে যা বলা হয়েছিল-
১. নরওয়ের নোবেল কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৯৯১ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার অং সান সুচিকে (মিয়ানমার) দেওয়া হবে। এটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য তার অহিংস সংগ্রামের জন্য দেওয়া হচ্ছে।
২. তিনি নিপীড়নের বিরুদ্ধে একজন আদর্শ হিসেবে পরিণত হয়েছেন।
৩. ১৯৯১ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি নোবেল কমিটি অং সান সু চিকে সম্মান জানাতে চায় বিশ্বের বহু মানুষের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম মানবাধিকার ও জাতিগত শান্তি বজায় রাখায় তার শান্তিপূর্ণ সমর্থন ও অবিরত প্রচেষ্টার জন্য। তাছাড়া তিনি শাখারভ পুরস্কার, জওহরলাল নেহরু পুরস্কার, আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার পুরস্কার, ওলফ পালমে পুরস্কার, ভগবান মহাবীর বিশ্বশান্তি পুরস্কার, কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।