মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করুন: নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি বাংলাদেশ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফেরত নিতে সেদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বুধবার ঢাকায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের এক বিশেষ ব্রিফিংকালে এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।বুধবার দুপুরে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে ঢাকায় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য- আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন ছাড়াও সুইডেন, জাপান, ইতালি ও মিশরের রাষ্ট্রদূতরাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন এবং কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোকে শক্ত অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।তিনি জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরবেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।
এদিকে, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নিতে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছে মিয়ানমার সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি'র একটি প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সংবাদ মাধ্যমকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, “প্রতিনিধি দলটি আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে ঢাকা সফরে আসবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে।’’
এর আগে, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দুর্দশা দেখতে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি’ কে কক্সবাজার সফরের আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান বিশ্ব সংস্থাটির সাতজন বিশেষজ্ঞ।
খাদ্য সহায়তা দেবে জাতিসংঘ
ওদিকে, জাতিসংঘ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা করছে।
আজ (বুধবার) জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, তারা এখন বিশাল সংখ্যায় শরণার্থীকে খাবার এবং অন্যান্য জরুরী সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
এ প্রসঙ্গে, ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের সহকারি প্রধান দিপায়ান ভট্টাচার্য জানান, জাতিসংঘের সব সংস্থা মিলে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যেন সাত লাখ রোহিঙ্গাকে সহায়তা দেয়া যায়।
তাছাড়া, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা দিতে বিশ্বব্যাংক প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান। আজ (বুধবার) সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ে 'বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তহবিল গঠন
চিমিয়াও ফান বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি আইডিএ-১৮–তে ‘রিফিউজি ফান্ড’ নামে নতুন একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এর পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার। যেকোনো দেশ প্রয়োজনে তিন বছরে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ডলার ঋণ পেতে পারে। বাংলাদেশও এই তহবিল পাওয়ার যোগ্য।
জাপানের উদ্বেগ
এছাড়া, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ জঙ্গিদের নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাপান। সেইসঙ্গে এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি।
বুধবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাপানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইওয়াও হরি এ আশ্বাস দিয়েছেন।#