রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিভিন্ন মহলের প্রশংসা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিভিন্ন মহলের প্রশংসা
মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে দ্রুত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে শনিবার থেকে সেনাবাহিনী পুরোদমে কাজ শুরু করেছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় দুযোর্গকালীন মানবিক সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীকে সংযুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে সেনাবাহিনী প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। শনিবার থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয় তাদের। তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসনে কাজ করছেন। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে আশ্রয় নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনেজ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে সেনাবাহিনী।
এ ছাড়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সমন্বয়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের কাজ চলছে। ওই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা দাযিত্ব পালন করছে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তা কাজে সেনাবাহিনী নিয়োগের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছেন রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্ট –এর সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন।
এদিকে, সেনাবাহিনী নিয়োগের প্রশংসা করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছি। এখন সরকার সেনা মোতায়েন করেছে। আশা করি সেনাবাহিনী পুর্ণ দায়িত্ব নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে এবং ত্রাণ বিতরণ সুচারুরুপে সম্পন্ন হবে।
কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে দলের উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে গিয়ে বিএনপির এ নেতা রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ত্রাণের জন্য রোহিঙ্গাদের লড়াই
ওদিকে, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, নতুন আসা রোহিঙ্গারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় ইতিমধ্যে ২৬ হাজার শেড নির্মাণ করেছে। সরকারিভাবে ১৪ হাজার শেড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি শেডে ছয়টি পরিবার থাকতে পারবে। সে হিসেবে ১৪ হাজার শেডে ৮৪ হাজার পরিবার বাস করতে পারবে। এ ছাড়াও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে ৪ হাজার শেড নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের দুটি শিবিরে আশ্রয় নেয়া প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী সরবরাহ জোরদার করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে বর্ষা মৌসুমে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর ন্যূনতম সুরক্ষায় তারা প্লাস্টিকের সিট বিতরণও ত্বরান্বিত করেছেন। এ লক্ষ্যে নতুন আগত শরণার্থীদের জন্য ইউএনএইচসিআর-এর সাইট প্ল্যানাররা কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ ২ হাজার একর জমির ওপর তাঁবুর ব্যবস্থা করতে সাহায্য করছে। কয়েক দশক ধরে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত কুতুপালং ক্যাম্প এর বর্ধিত অংশ নতুন ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত। বর্ধিতাংশ ক্যাম্পটি ইউএনএইচসিআর এর সহায়তায় সরকার কর্তৃক পরিচালিত।
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির
সংস্থাটি আরো জানায়, তারা রোহিঙ্গা নেতাদের মাধ্যমে নির্ধারিত সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের মাঝে পরিকল্পনা অনুযায়ী রান্নাঘরের সামগ্রী, ঘুমানোর ম্যাট, সোলার ল্যাম্প ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে। রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবী এবং ঠিকাদাররা নতুন আসা শরণার্থীদের জরুরি আশ্রয়ে সহায়তা করছে তবে সাইট প্ল্যানের জন্য পর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং পানি উঠতে না পারে এমন উঁচু ও সমতল ভূমির সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ইউএনএইচসিআর-এর মতে, গত সাড়ে ৩ সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে আসা অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারই কুতুপালং ও নয়াপড়া এই দুই শিবিরে বা স্কুল অথবা বিভিন্ন সরকারি ভবনে আশ্রয় নিয়েছে।
এ ছাড়া, তুরস্ক সরকার বাংলাদেশে আশ্রিত এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা দেবার কথা ঘোষণা দিয়েছে। তুরস্ক রোহিঙ্গাদের জন্য শীঘ্রই ১৩টি আইটেমের সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত ১০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করবে।
সফররত তুরস্কের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থার সমন্বয়ক আহমেদ রফিক রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপির সঙ্গে তার সচিবালয়ের অফিসকক্ষে সৌজন্য সাক্ষাতকালে একথা জানান।#