মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেছেন, কিছু শরণার্থীকে ফেরত আনার জন্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন ‘যেকোনো সময়’ এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
জাপানের নিকি এশিয়ান রিভিউ পত্রিকাকে গত বুধবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন সু চি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে শরণার্থীদের পালিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সু চি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রাখাইনের সংকট মিয়ানমারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। দারিদ্র্য দূর করতে এ ধরনের আর্থিক সংস্কার প্রয়োজন। দারিদ্র্যের কারণেই চরমপন্থার সৃষ্টি হয়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার এক দিন পরেই জাপানের পত্রিকায় এই সাক্ষাৎকার দিলেন সু চি। ওই বক্তব্যে সু চি রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর ভূমিকায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার প্রসঙ্গে কথা বলেন।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপর থেকেই রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান চলে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। দমন-পীড়ন চলে তাদের ওপর। সহিংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘ সময় নীরব থাকার পর টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সু চি। তাতেও তিনি মিথ্যাচার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতারা সু চির বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূলীকরণে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। সমালোচকেরা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধে সু চি ইচ্ছুক নন।
এসব সমালোচনা প্রসঙ্গে সু চি বলেন, কোনো কিছুই অবাক করার মতো নয়। কারণ, অন্য সব মতামতের মতো বিশ্ব মতামতও বদলায়।
অভ্যন্তরীণ সমালোচনার কথা উল্লেখ করে সু চি বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দল রয়েছে। কারণ, আমরা গণতান্ত্রিক দেশ। তার মানে হলো সমালোচনা এবং বাগ্বিতণ্ডার সুযোগ রয়েছে আমাদের দেশে।’
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সু চি দাবি করেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রাখাইনে আর কোনো অভিযান হয়নি। এরপরও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে সু চি বলেন, এত বিপুল রোহিঙ্গা শরণার্থী কেন আসছে, তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে মিয়ানমার সরকার।