ডিসিদের প্রতি জনকল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনকল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে দেয়ার লক্ষে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে সিদ্ধান্তই নেই, সেটা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বর্তায়। আপনাদের আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা, যোগ্যতাই পারে এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে দিতে। কাজেই আপনারা সেভাবেই কাজ করবেন।’
জেলা প্রশাসকদের জন্য ২৩ দফা নির্দেশনা প্রধান করে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই দেশকে এগিয়ে নিতে এবং আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাই হচ্ছে একটি দেশকে উন্নত করতে পারে, সেই অভিজ্ঞা আমরা ইতোমধেই অর্জন করেছি।
’৭৫ থেকে ’৯৬ এ দেশের মানুষ শুধু বঞ্চনারই শিকার হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যে জনগণের সেবক সেটা তখনই মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে- যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।
তিনি বলেন, এই ৮ বছরে বাংলাদেশের যে উন্নয়নের ধারাটা সূচিত হয়েছে, আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ একটা মর্যাদা পেয়েছে। দেশ স্বাধীন না হলে এটা কোনদিনও হতনা।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জন প্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। আরো বক্তৃতা করেন, মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। মন্ত্রী পরষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
জেলা প্রশাসকদের পক্ষে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম উন্মে সালমা তানজিয়া, চাঁদপুরের আব্দুস সবুর মন্ডল এবং যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন এবং ময়মনসিংগের বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন বক্তৃতা করেন।
জেলা প্রশাসকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ২৩ দফা নির্দেশনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের করণীয় হিসেবে ২৩ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ যেন শহরমুখী না হয়। শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।
ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, গ্রামের মুরুব্বি, নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, নারী সংগঠক, আনসার-ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, এনজিও কর্মীসহ সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে।
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে।
শিক্ষার সর্বস্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় আরও সচেষ্ট হতে হবে।
কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘœ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হতে হবে।
ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করে এসব অনৈতিক কর্মকা- কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজির সফল বাস্তবায়নে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘœ করা এবং পেশিশক্তি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাস নিমূর্ল করতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যে কোন অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
নারী উন্নয়ন নীতি সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ এবং নারী ও শিশু পাচার রোধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ইতিহাস চেতনা, জ্ঞানস্পৃহা ও বিজ্ঞানমনষ্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।
কঠোরভাবে মাদক ব্যবসা, মাদক চোরাচালান এবং এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে।
পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দয্য ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ করতে হবে। পর্যটন শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।
এসবের বাইরে নিজস্ব জেলাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে এগুলো সমাধানের উদ্যোগ এবং নদী ভাঙ্গনের শিকার ও গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি তৈরি করে দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ সময় মঞ্চে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি সেবা নিতে এলে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে জেলা প্রশাসকদের কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে সরকারি সেবা নিতে এলে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে নজর দিতেও প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানান।
আজ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলনে এক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এই ৮ বছর সরকারে আছি তাই উন্নয়ন হয়েছে। আমরা দেশকে কি দিতে পেরেছি সেটাই বড় কথা। উন্নয়নের ধারা বজায় রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতের লক্ষ্য ছিল দেশকে পরনির্ভরশীল করে রাখা। আর নিজেদের বিত্ত-বৈভব বৃদ্ধি করা হলো তাদের নীতি। এখন আমাদের খাদ্যে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন দেশ। আমার যে উন্নতি করতে পারি তা প্রমাণ করেছি। তিনি বলেন, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং ছিল বিএনপি-জামায়াতের কাজ।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে মিত্র বাহিনীকে ফেরৎ নিতে হয়েছে। পৃথিবীতে একটিমাত্র ঘটনা যা বঙ্গবন্ধুর জন্য হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন চেতা ছিলেন, ইন্দিরা গান্ধীও স্বাধীন চেতা ছিলেন।
তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হয়েছে আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সরকারের নীতি-নির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সরকারের নীতি, দর্শন, প্রাধিকার- এগুলো নিয়ে প্রতি বছর বৈঠক হয়। এবার প্রাপ্ত প্রস্তাব ৩৪৯টি। এগুলো ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে প্রস্তাবগুলো এসেছে।#