মেয়েদের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের সামনে আজ ইংল্যান্ড
সেই লর্ডসেই স্বপ্নে বিভোর মিতালিরা
ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। প্রথমবারের জন্য মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি মিতালি রাজদের সামনে। লর্ডসে রবিবার আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেতাবি লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ভারত।
এই লর্ডসেই ৩৪ বছর আগে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। তৎকালীন মহাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেশকে প্রথমবার বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন কপিল দেবরা। ১৯৮৩ সালের সেই ফাইনালের পর ক্রমে বিশ্ব ক্রিকেটের ‘পাওয়ার হাউস’ হয়ে উঠেছে ভারত। রবিবার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীদের সামনেও সুযোগ রয়েছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটকে সাফল্যের নয়া উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাওয়ার। সামনে তিন বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। মহিলাদের বিশ্বকাপে মোট ছয় বার ফাইনালে খেলেছে তারা। এবার তাদের সঙ্গে থাকবে ঘরের মাঠে খেলার সুবিধাও। তার ওপর চলতি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের কাছে ৩৫ রানে হারের পর আর একটি ম্যাচেও হোঁচট খায়নি হিথার নাইটের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ মেয়েরা। তবুও খেতাবি লড়াইয়ের আগে এমন হেভিওয়েট প্রতিপক্ষকেও স্পষ্ট হুঁশিয়ারি ছুঁড়ে দিয়েছেন ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন মিতালি রাজ। আসলে সেমি-ফাইনালে ছয় বারের বিশ্বসেরা অস্ট্রেলিয়াকে ৩৬ রানে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছেন ভারতের মেয়েরা। আর সেই মনোবলই মিতালি-ঝুলনদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে প্রথমবার দেশকে মহিলাদের বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার। ২০০৫ সালে ভারত প্রথমবার ফাইনালে উঠেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিল ৯৮ রানে। এবার সেই অস্ট্রেলিয়াকে সেমি-ফাইনালে হারিয়েই খেতাবি লড়াইয়ে পৌঁছেছে ভারতের মেয়েরা। সেই ম্যাচে ১১৫ বলে অপরাজিত ১৭১ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে দলকে দ্বিতীয় বারের জন্য বিশ্বকাপ ফাইনালের টিকিট এনে দিয়েছেন হরমনপ্রীত কাউর। রবিবারও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে দল।
তবে ভারতের প্রথম সারির অন্য ব্যাটসওম্যানরাও রানের মধ্যে রয়েছেন। ক্যাপ্টেন মিতালি রাজ এবারের বিশ্বকাপে ইতিমধ্যে ৩৯২ রান করে ফেলেছেন, যা এই মুহূর্তে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বাধিক রান। এছাড়া দুই ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা এবং পুনম রাউতও এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। তবে গত কয়েকটি ম্যাচে বড় রানের ওপেনিং জুটি গড়ে তুলতে পারেননি তাঁরা। ফাইনালে কিন্তু স্মৃতি ও পুনমের ইনিংস সূচনার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে দলের সাফল্য। হরমনপ্রীত কাউর সেমি-ফাইনালের আগে পর্যন্ত সেভাবে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। কিন্তু দলের প্রয়োজনের সময় তিনি জ্বলে উঠেছেন। ফাইনালেও একইরকম পারফরম্যান্স দেখাতে তৈরি তিনি। ভারতীয় বোলাররাও ভালো পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন। নতুন বল হাতে বাংলার ঝুলন গোস্বামী দারুণ ছন্দে ফিরে এসেছেন। আর এক পেসার শিখা পান্ডেও ভালো ফর্মে রয়েছেন। আবার স্পিনাররাও প্রতি ম্যাচে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। ফাইনালেও এই টিম গেম মেলে ধরতে পারলে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে ভারতীয় মেয়েদের সামনে।
ক্যাপ্টেন মিতালি রাজ এখন মেয়েদের ওয়ান ডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। আর ঝুলন গোস্বামী হলেন সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক। দু’জনেরই বয়স ৩৪ পেরিয়েছে। তাঁদের বিশ্বকাপ জয়েরও এটাই শেষ সুযোগ। মিতালি সেটা বিলক্ষণ জানেন। ২০০৫ সালের ফাইনালে খেলা যে দু’জন ক্রিকেটার বর্তমান ভারতীয় দলে রয়েছেন তাঁদের একজন হলেন ঝুলন গোস্বামী, অন্যজন মিতালি রাজ স্বয়ং। ফাইনালের আগে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মিতালি বলেছেন, ‘আমার এবং ঝুলনের কাছে এই ফাইনাল স্পেশাল। ২০০৫ সালের ফাইনালে খেলা দলের মধ্যে শুধুমাত্র আমরা দু-জন এখনও খেলে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে, আমরা আবার ২০০৫ সালে ফিরে গিয়েছি। ফের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে নামার আগে মনের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা অনুভব করছি। সেবার যা পারিনি, এবার সেটা করে দেখাতে চাই।’ সেই সঙ্গে তিনি যোগ করছেন, ‘আমরা জানতাম এই টুর্নামেন্ট সহজ হবে না। কিন্তু মেয়েরা যেভাবে দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছে, তারই সুফল স্বরূপ আমরা ফাইনালে উঠতে পেরেছি। আশা করি, রবিবারও আমরা সেরা ক্রিকেট মেলে ধরে হাসি মুখে মাঠ ছাড়তে পারব। জানি, আয়োজক দেশের বিরুদ্ধে খেলাটা সবসময়ই কঠিন। তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ওদের আমরা হারিয়েছি। তাছাড়া সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় আমাদের বাড়তি প্রেরণা জোগাবে। সেই সঙ্গে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতার সংকল্প তো রয়েছেই।’ ক্যাপ্টেন মিতালি বুঝিয়ে দিলেন, ১২ বছর আগের হতাশার পুনরাবৃত্তি নয়, এবার কাপ নিয়েই দেশে ফিরতে চাইছেন তিনি।