সুমন/রিপন/ খোকন//
মেহেরপুর দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মৃত্যুর আবেদনকারী সবুর মিয়ার মৃত্যু
জেলা প্রশাসকের কাছে মৃত্যুর আবেদন করা ডুফিনি মাসুকুলার ডিসট্রফি রোগে আক্রান্ত মেহেরপুর শহরের বেড়পাড়ার তোফাজ্জেল হোসেনের বড় ছেলে সবুর মিয়া মারা গেছেন।
আজ শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নি:শ^স ত্যাগ করেন। খবর পেয়ে বিকালে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ সবুর মিয়ার মৃতদেহ দেখতে যান । এসময় তিনি সবুরের পিতামাতাসহ পরিবারের লোকজনকে সান্তনা দেন।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে এ রোগে আক্রান্ত দুই ছেলে এবং এক নাতির স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন সবুরের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতে ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়সম্বল সব শেষ করে নিঃস্ব হন তিনি। চোখের সামনে নিজের সন্তানদের মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া দেখে চরম অসহায়ত্ব বোধ করেন তোফাজ্জেল। অসহায়ত্ব বোধ থেকেই তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে এমন আবেদন জানান
এ খবর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে দূরারোগ্য ব্যাধি ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রফি (ডিএমডি) রোগে আক্রান্ত তিন রোগীর চিকিৎসার জন্য তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করেন মেহেরপুর সিভিল সার্জন। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট আশিষ কুমার দেবনাথ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. অলোক কুমার দাস, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল কবীর ওই টিমের সদস্য ছিলেন। সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা সে সময় জানিয়েছিলেন, রোগটি জিনগত। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। এর আগেও জেলা থেকে একটি মেডিকেল টিম গঠন করে তার রিপোর্ট স্বাস্থ্য বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এ রোগের চিকিৎসা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দেশিবিদেশি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের কিছুদিন পর ওই তিনজনের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থিত নিউরোজেন ব্রেইন এন্ড স্পাইন ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দূরারোগ্য ব্যাধি ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রফি আক্রান্ত রোগীদের ভারতে নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করার আগ্রহ প্রকাশ করায় আশার আলো দেখতে শুরু করেন দরিদ্র তোফাজ্জেল হোসেন। সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে আসেন তারা
তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, সর্বাত্মক চেষ্টা করেও ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। এখন ছোট ছেলে এবং নাতি যেহেতু একই রোগে আক্রান্ত সেহেতু তাদের মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুণতে হবে। চোখের সামনে ছেলের কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারি না। আত্মহত্যাও করতে পারি না। কে দেখবে তাদের। বড় ছেলে ১২ বছর বয়স থেকে বিছানায়। চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলায় তার খাওয়া-দাওয়া, গোসল, প্রাকৃতিক কাজ সবই কোলে করে করাতে হতো। কোন কিছুই করতে পারতো না সে। এখন ছোট ছেলে এবং নাতিটাও একই অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এ কষ্ট কি করে সহ্য করব?