গুজরাটে গো-রক্ষা ও ‘লাভ জিহাদ’ বন্ধে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ত্রিশূল বিলি!
ভারতে বিজেপিশাসিত গুজরাটে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের পক্ষ থেকে ত্রিশূল বিলি করা হয়েছে। গরু রক্ষা এবং ‘লাভ জিহাদ’ বন্ধ করতে ওই ত্রিশূল বিলি করা হয়েছে বলে সংগঠন দু’টির দাবি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহাসচিব মহাদেব দেশাই বলেন, ‘গত দেড় বছরে যুবকদের মধ্যে কমপক্ষে ৪ হাজার ত্রিশূল বিতরণ করা হয়েছে। গান্ধীনগর সিটি এবং জেলায় এসব ত্রিশূল বিতরণ হয়েছে। ত্রিশূল রাখার যুবকদের কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
গান্ধীনগরে গত ১২ জুন ৭৫ জন যুবকের হাতে ত্রিশূল তুলে দেয়া হয়েছে। গত ৬ কর্মসূচিতে ৭০০ ত্রিশূল বিতরণ করা হয়েছে। মহাদেব দেশাইয়ের দাবি, ত্রিশূল কোনো বড় অস্ত্র নয়। এটি নিষিদ্ধ অস্ত্রের চেয়ে ছোট যা খুবই সহায়ক হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘গুজরাটে গরু জবাইয়ের বেশ কিছু ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সময় এসেছে , যখন হিন্দু যুবকদের লড়াইয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি ‘লাভ জিহাদ’র বিপদ রুখতেও উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড মোতায়েন করছি।’
গান্ধীনগরের বজরং দলের সভাপতি শক্তিসিং জালা বলেন, ‘আমরা হিন্দু যুবকদের একটি শক্তিশালী ইউনিট তৈরি করতে চাই যারা হিন্দুত্ব পালন করবে। গান্ধীনগরে আমাদের ত্রিশূল দীক্ষা কর্মসূচি ওই মিশনের অংশ।’
এ নিয়ে গান্ধীনগরের পুলিশ সুপার বলেন, ‘আইন সকলের জন্য সমান এবং কোনো প্রকাশ্যস্থানে ত্রিশূল বা কোনো অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার কোনো অনুমতি নেই। যদি আইন ভেঙে যুবকদের কাছে ত্রিশূল পাওয়া যায় তাহলে পদক্ষেপ করা হবে।’
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের কালোল এলাকাতেও আগামী ২০ জুন যুবকদের মধ্যে ত্রিশূল দীক্ষা কর্মসূচি চালাবে। এতে এক হাজারেরও বেশি যুবকদের আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
গরু জবাই বন্ধ এবং কথিত ‘লাভ জিহাদ’ প্রতিরোধ কর্মসূচি মুসলিমদের টার্গেট করে করা হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
হিন্দুত্ববাদীরা সাধারণত দাবি করে থাকে, মুসলিম যুবকরা হিন্দু মেয়েদের নানাভাবে প্রলোভিত করে তাদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে কথিত ‘লাভ জিহাদ’-এর শিকারে পরিণত করে।
এর আগে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছিল সংখ্যালঘুরা। সংখ্যালঘু অধিকার বিষয়ক আইনজীবী শাহজাদ পুনাওয়ালা সেসময় ‘২০০৮-’০৯ সাল থেকে ‘লাভ জিহাদ’র দাবি করা হলেও তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। আরএসএস এবং তার সংশ্লিষ্ট সংগঠন ভোটারদের সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বিভক্ত করার জন্য এরকম দাবি করে থাকে। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘লাভ জিহাদ’র দাবি সম্পূর্ণ ভুয়া।’
হিন্দুত্ববাদীরা কথিত ‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রচারণা চালালেও বিজেপি’র দুই মুসলিম নেতা মুখতার আব্বাস নাকভি এবং শাহনওয়াজ হুসেন দু’জনের স্ত্রীই হিন্দু।
গরু জবাই ইস্যুতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ইস্যুতে কর্মসূচি হাতে নিলেও গুজরাটে চলতি জুনে 'প্রাণি সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত)-২০১৭' কার্যকর হয়েছে। এতে রাজ্যে কেউ গরু জবাই করলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে। চলতি বছরের মার্চে গুজরাট বিধানসভায় এ সংক্রান্ত আইন পাস করা হয়।
নয়া আইনে বাছুর অথবা গরু অবৈধভাবে পরিবহণ, গরুর গোশত বা গরুর গোশতের তৈরি পণ্য, গরুর গোশত স্টোরেজ বা গরুর গোশত প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও ৭/১০ বছরের সাজার ব্যবস্থা রয়েছে এবং ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। এর আগে গরু জবাইয়ের জন্য ৩ থেকে ৭ বছর কারাবাস এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার ব্যবস্থা ছিল।#